শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১০:১১ অপরাহ্ন

কাশ্মিরের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি ‘চিহ্নিত’ করে ভাঙচুর, আনুষ্ঠানিক কিছু জানায়নি পুলিশ ভারতে নিষিদ্ধ ১৬ পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল, বিবিসিকে সতর্কবার্তা ১৩০টি পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের দিকে তাক করা আছে : পাকিস্তানের মন্ত্রী

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫

এফএনএস বিদেশ : গত সপ্তাহে কাশ্মীরে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলার পর পরিস্থিতি এতটাই অস্থির হয়ে উঠেছে যে সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেই চলছে। এই ঘটনা দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। এর আগে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তিনটি যুদ্ধ হয়েছে, যা দুটি কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে। দুটি দেশই পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের অংশ বলে দাবি। যদিও বর্তমানে দুই দেশ এর ভিন্ন ভিন্ন অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়া আরও কয়েকবার দেশ দুটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। এমন চরম উত্তেজনার মধ্যেই পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী মোহাম্মদ হানিফ আব্বাসি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তানের ১৩০টির বেশি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘এমনি এমনি সাজিয়ে’ রাখা হয়নি। এগুলো ‘শুধুই ভারতের জন্য’ রাখা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর দিয়েছে। এছাড়া ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু, ফার্স্ট পোস্ট, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসও একই তথ্য জানিয়েছে। হানিফ আব্বাসি গত শনিবার আরও বলেন, এসব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রই তোমাদের (ভারতের) দিকে তাক করা আছে। পাকিস্তানের রেলমন্ত্রীর এমন মন্তব্য দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কাশ্মীরের পেহেলগামে সা¤প্রতিক হামলার ঘটনার সঙ্গে ইসলামাবাদের যোগসূত্র রয়েছে বলে নয়াদিল্লি অভিযোগ করেছে। যদিও ভারত এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। ভয়াবহ ওই হামলার পর পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। এছাড়া পাকিস্তানি ক‚টনীতিকদের বহিষ্কার এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করেছে ভারত। জবাবে পাকিস্তানও ভারতীয় ক‚টনীতিকদের বহিষ্কার করেছে, ভারতীয়দের ভিসা বাতিল করেছে এবং ভারতীয় উড়োজাহাজের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করেছে। কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর উসকানিমূলক ও সা¤প্রদায়িকভাবে সংবেদনশীল বিষয়বস্তু ছড়ানোর অভিযোগে ভারতে ১৬টি পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে এসব চ্যানেল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া, ভারত সরকার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিকেও সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। নিষিদ্ধ চ্যানেলগুলোর মধ্যে রয়েছে ডন, সামা টিভি, এআরওয়াই নিউজ, বোল নিউজ, রাফতার, জিও নিউজ ও সুনো নিউজ। পাশাপাশি সাংবাদিক ইরশাদ ভাট্টি, আসমা শিরাজি, উমর চিমা এবং মুনিব ফারুকের ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেলও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া দ্য পাকিস্তান রেফারেন্স, সামা স্পোর্টস, উজাইর ক্রিকেট এবং রাজি নামা চ্যানেলও নিষিদ্ধের তালিকায় রয়েছে। সরকারি সূত্র জানায়, এসব ইউটিউব চ্যানেল ভারত, এর সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে উসকানিমূলক মন্তব্য, মিথ্যা তথ্য এবং বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রচার করছিল। বিশেষ করে পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের টানাপোড়েনের মধ্যে এগুলোর কার্যক্রম আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। এখন কেউ এসব চ্যানেলে প্রবেশ করতে চাইলে দেখতে পাচ্ছেন- জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত সরকারি আদেশের কারণে এই চ্যানেলটি বর্তমানে এই দেশে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে, ভারত সরকার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিকেও সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ হামলার পর ভারতীয়দের ভিসা স্থগিত করেছে পাকিস্তান। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মতে, এই শিরোনাম পাঠকদের বিভ্রান্ত করতে পারে ও ভারতের বিরুদ্ধে নেতিবাচক বার্তা দিতে পারে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার বিভাগ বিবিসির ভারতের প্রধান জ্যাকি মার্টিনের কাছে দেশের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছে। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামের বৈসরান তৃণভ‚মিতে ছুটি কাটাতে আসা পর্যটকদের ওপর হামলা চালান বন্দুকধারীরা। এতে ২৬ জন নিহত হন। এ ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তান একে অপরকে দোষারোপ করছে। এনডিটিভি জানিয়েছে, পহেলগাম হামলায় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে ভারত কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। সিন্ধু জল চুক্তি ও পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা স্থগিত করেছে নয়াদিল্লি। জবাবে ইসলামাবাদ বলেছে, সিমলা চুক্তিসহ ভারতের সঙ্গে সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করার অধিকার তাদের রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, হামলায় জড়িতরা এমন শাস্তি পাবে যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না। তিনি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সূত্র: এনডিটিভি। অন্যদিকে ‘দোষীদের কঠোর শাস্তি দেয়া উচিত। তাদের প্রতি দয়া দেখানো উচিত নয়। কিন্তু নিরীহ মানুষ যাতে এর শিকার না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিত।’ পেহেলগাম হামলার পর পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মিরের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু ‘চিহ্নিত বাড়ি’ ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। অধিকৃত কাশ্মিরের পেহেলগামের বাইসারান ভ্যালিতে ২৬ জন নিহতের ঘটনার পর ব্যাপকভাবে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। বিবিসি হিন্দির তথ্য অনুযায়ী, অন্ততপক্ষ দশটি বাড়িতে এই অভিযান চালানো হয়েছে। এরকম দু’জন ব্যক্তির সাথে কথা বলেছে বিবিসি হিন্দি। যাদের একজন আদিল হোসাইন ঠোকার। অনন্তনাগ পুলিশ যে তিনজন সন্দেহভাজনের স্কেচ প্রকাশ করেছে, তাদের মধ্যে আদিল হোসাইন ঠোকার নাম রয়েছে। তবে বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়ার এই অভিযানের বিষয়ে পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর কেউই এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। পুলিশ বেশ কিছু মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক রাখলেও এখনো তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। পুলিশের মহাপরিচালকসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে যোগাযোগ করেছে বিবিসি হিন্দি। কিন্তু প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত কেউই সাড়া দেয়নি। আদিল ঠোকারের পরিবার বিবিসি হিন্দিকে জানিয়েছে, ২৫ এপ্রিল রাতে সেনাবাহিনী এবং পুলিশ তাদের বাড়িতে যায়। ঠোকারের মা শাহজাদা বানু বলেন, রাত সাড়ে ১২টা পর‌্যন্ত সেনাবাহিনী এবং পুলিশের লোকজন এখানে ছিল। আমি তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলাম এবং ন্যায়বিচার চেয়েছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম কী দোষ আমাদের। কিন্তু তারা আমাদের চলে যেতে বলে এবং অন্য বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। রাত সাড়ে ১২টায় প্রচÐ বিস্ফোরণ ঘটে। পুরো এলাকার প্রতিবেশীদেরকে ১০০ মিটার দূরে থাকতে বলা হয়েছিল। সব লোকজনকে সেখান থেকে সরানো হয়েছিল। কেউ কেউ সরিষা ক্ষেতে আবার কেউ কেউ অন্যদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। পুলিশ মিজ বানুর দুই ছেলে এবং স্বামীকে গ্রেফতার করেছে বলে জানান তিনি। তার ছেলে আদিল ২০১৮ সাল থেকে নিখোঁজ বলে জানান মিজ বানু। কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং পিডিপির প্রধান মেহবুবা মুফতি এই অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স এ তিনি লিখেছেন, পেহেলগাম হামলার পরে ভারত সরকারকে উগ্রবাদী এবং নিরীহ সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে ও সতর্ক থাকতে হবে। যারা উগ্রবাদের বিরুদ্ধে তাদের বিচ্ছিন্ন করা সরকারের উচিত নয়। এরই মধ্যে কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ টুইটারে লিখেছেন, পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পরে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে একটা লড়াই অবধারিত। উগ্রবাদ এবং নিরীহ মানুষকে হত্যার বিরুদ্ধে কাশ্মিরের মানুষ এখন প্রকাশ্যে কথা বলছে এবং তারা নিজেরাই এটা করছে। এখন জনগণের এই সমর্থনকে আরো শক্তিশালী করার সময় এসেছে। এমন কিছু করা উচিত না যাতে তারা বিচ্ছিন্ন বোধ করে। তিনি আরো লিখেছেন, দোষীদের কঠোর শাস্তি দেয়া উচিত। তাদের প্রতি দয়া দেখানো উচিত নয়। কিন্তু নিরীহ মানুষ যাতে এর শিকার না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিত। সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com