এস এম জাকির হোসেন শ্যামনগর থেকে\ সাতক্ষীরা’র শ্যামনগর উপজেলার উপকূলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে অপরূপ নির্মাণশৈলীতে নির্মিত হয়েছে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। এই হাসপাতালটি উপজেলার শ্যামনগর থেকে নূরনগর গামী প্রধান সড়কে সোয়ালিয়া নামক স্থানে অবস্থিত। শ্যামনগর উপজেলা সদর থেকে এই হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। ফ্রেন্ডশিপ এনজিওর সহায়তায় শ্যামনগরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে তোলা এই কমিউনিটি হাসপাতাল উপজেলার হাজার হাজার মানুষের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। উপকূলের এমন একটি এলাকায় এ হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়েছে যা ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ৮০শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতাল ভবনের নকশা করেছেন স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। যিনি এর আগে আগা খান স্থাপত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান ‘আরবানা’ ভবনটি নির্মাণ করেছে। এস্থাপনার বিশেষত্ব হচ্ছে, স্থানীয় প্রকৌশলীরা স্থানীয়ভাবে তৈরি নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে ভবনটি গড়েছেন। ভবনটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে প্রচুর আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে। নিশ্চিত করা হয়েছে বিদ্যুতের সর্বনিম্ন ব্যবহার। পানি ধরে রাখার জন্য জলাধার রাখা হয়েছে। গ্রীষ্মকালে গরম থেকে বাঁচতে ভবনের ভিতরের লেকগুলোতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালের নিরাপত্তা, সহজে যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে চালু হয়েছে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। ২০১৩ সালে নকশা করার পর চার বছরে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। বিশ্বের ১১টি দেশের ১৬টি ব্যতিক্রমী নতুন স্থাপনা থেকে বাছাই করে তিনটি স্থাপনার সংক্ষিপ্ত তালিকা চূড়ান্ত করে রিবা আন্তর্জাতিক পুরস্কারের পাঁচ সদস্যের জুরি বোর্ড। গত ১৬ নভেম্বর রিবা আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ‘বিশ্বের সেরা নতুন ভবনের’ সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে বাংলাদেশের শ্যামনগর উপজেলার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের সঙ্গে ছিল জার্মানির বার্লিনের জেমস-সায়মন-গ্যালারি এবং ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের লিলে ল্যাঞ্জেব্রো সেতু। সেখান থেকেই দ্বিবার্ষিক এ পুরস্কারের চূড়ান্ত বিজয়ী হিসেবে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের নাম ঘোষণা করা হয়। গতকাল বুধবার ২৬ জানুয়ারি শ্যামনগর ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালকে ২০২১ সালের রিবা অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক এ স্থাপত্য সংস্থাটি। ২০২১ সালেও রিবা অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিল ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। পুরস্কারের জুরি বোর্ড বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা দক্ষিণ বাংলার জলো পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে সাতক্ষীরার ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। তারা এই হাসপাতাল স্থাপনাটিকে একটি ‘মানবিক স্থাপত্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পুরষ্কারের খবরে স্থপতি কাশেফ চৌধুরী বলেন, “কম বাজাটের মধ্যেও স্থাপত্য কীভাবে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকাকে শক্তিশালী ও সক্ষম করে তুলতে পারে তার উৎসাহব্যাঞ্জক উদাহরণ হচ্ছে এই ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, এই জন্য যে রিবা এবং এর জুরিরা বিশ্বের প্রান্তিক অঞ্চল থেকে একটি প্রকল্পকে চিহ্নিত করে বিশ্বের কেন্দ্রে তুলে এনেছেন এবং একে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্ববহ পুরস্কারে ভূষিত করেছেন। এবিষয়ে ফেন্ডশিপ হাসপাতালের তথ্য কর্মকর্তা জুনায়েদ সাকি জানান, গত ২৫ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ইন্সটিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্ট (রিবা) ইমেইলের মাধ্যমে তাদের জানিয়েছে হাসপাতাল ভবন ও ভবনের স্থপতিকে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে ন্যূনতম সম্পদ ব্যবহার করে নির্মিত ভিন্ন শৈলীর এই হাসপাতাল জন্ম লগ্ন থেকেই উপজেলা সহ বিভিন্ন এলাকার গরিব দুঃখী অসহায় মানুষদের আধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। ৬ জন চিকিৎসক, ১২জন নার্স এবং অন্যান্য সহকারীর সমন্বয়ে ৮০ শয্যার হাসপাতালটিতে রয়েছে ৪টি ওয়ার্ড। ৩টি অপারেশন থিয়েটারের মাধ্যমে বেশিরভাগ অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে এখানে। প্রত্যন্ত এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ এবং অ্যাম্বুলেন্স সুবিধায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে।