শাহজাহান ডুমুরিয়া থেকে \ উপজেলার হাট—বাজারে এখন ভেজাল চালে সয়লাব। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও নামে চাল পাওয়া গেলেও এসব চালের ভাত স্বাদহীন লাগে। আগের মতো ঘ্রাণও পাওয়া যায় না। অধিকাংশ ব্র্যান্ডের চাল রান্নার ২/৩ ঘণ্টার মধ্যে ভাত নষ্ট হয়ে যাওয়া বা ভাত ভিজে ওঠার অভিযোগ রয়েছে। চালের উচ্চমূল্যের সঙ্গে এসব অভিযোগের কোনও জবাব পাওয়া যায় না বিক্রেতাদের কাছ থেকে। ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন বাজারে কয়েকটি চালের দোকান ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব অভিযোগ মিলেছে। ক্রেতারা বলছেন, মিনিকেট চাল দেখতে যতটা সরু, রান্নার পর ভাত আর ততটা সরু হয় না। এমনকি ভাতের কোনও ঘ্রাণও থাকে না। বেশি দাম দিয়েও এসব চালের বিশেষ কোনও গুণাগুণ খুঁজে পান না তারা। অনেকের মতে, এখনকার মিনিকেট চালের ভাত স্বাদে অনেকটাই ইরি চালের ভাতের মতো। রান্নার ২/৩ ঘণ্টার মধ্যেই ভাতে ভেজাভাব চলে আসে। অন্যদিকে, নাজিরশাইল চাল সব সময়ই উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে কদর পেয়ে এসেছে। তাই বেশি দাম হলেও এ চাল নিয়ে তেমন অভিযোগ নেই। বিক্রেতাদের কাছ থেকেও আপত্তিকর কিছু শোনা যায় না। তবে ইদানীং ক্রেতারা নাজিরশাইল নিয়েও অভিযোগ তুলছেন। তারা বলছেন, এখনকার নাজিরশাইল চালের ভাতের রং কালচে, আগের মতো ধবধবে সাদা হয় না। বরং রান্নার ২/৩ ঘণ্টার মধ্যে বাজে গন্ধ ছড়ায় এবং তা খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে— অর্থাৎ ভাত নষ্ট হয়ে যায়। বাজারে নানা নামে নানা ব্র্যান্ডের চাল পাওয়া গেলেও এখন আর আউশ, আমন, ইরি বা বোরো চাল সচরাচর দেখা মেলে না। যদিও কিছু সুপারশপে আউশ—আমন চাল বিক্রি হয়, তাও দাম প্রতি কেজিতে ১০০ টাকার কাছাকাছি। বাজারে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় মিনিকেট, রানী চাল, নাজিরশাইল, পাইজাম আর বি—২৮ জাতের চাল। এসব জাতের চালের উৎপাদন নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। সরকারি তরফ থেকে বহুদিন ধরেই বলা হচ্ছে। মিনিকেট নামে দেশে কোনও ধানের জাত নেই। মিনিকেট আসলে ইরি চাল, যা মেশিনে কেটে চিকন করে ক্রেতার আগ্রহ বাড়িয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, বাজারে মিনিকেটসহ বিভিন্ন চকচকে চালের মান ও পুষ্টিহীনতা নিয়ে। যেহেতু মিনিকেট নামে কোনও ধানের জাত নেই, তাই কম দামের অন্যান্য জাতের ধান মেশিনে ছাঁটাই করে এই চাল প্রস্তুত করা হয়। চাল যত বেশি পালিশ করা হয়, দামও তত বাড়ে। আবার ছোট প্যাকেটে বাজারজাত করলে দাম আরও বেড়ে যায়। মূলত পুরো বিষয়টি ঘটে মিলার ও বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলোর কারসাজির মাধ্যমে এমনটাই বলছেন অনেকেই। মিনিকেট চাল সম্পর্কে সরকারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিনিকেট আসলে একটি ব্র্যান্ডের নাম। পালিশ, ফাইন পালিশ, মিডিয়াম পালিশের মাধ্যমে মিলাররা এই ব্র্যান্ডের চাল তৈরি করে বাজারজাত করছে।