বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ০৩:০৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
পাকিস্তানে এবার সাইবার হামলার তৎপরতা, প্রথম পদক্ষেপে ব্যর্থ ভারতীয় হ্যাকাররা ভারত-পাকিস্তানকে সংযমী হওয়ার আহŸান চীনের গাজার বাসিন্দাদের কাছে অবিলম্বে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে হবে : রেড ক্রস ২০২৭ সালের মধ্যে রুশ গ্যাস আমদানি বন্ধের প্রস্তাব ইইউ’র আজ মস্কোতে পুতিন-শি বৈঠক, আলোচনা হবে ইউক্রেন যুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে রাশিয়ার ঐতিহাসিক বিজয় দিবস প্যারেডে থাকবেন শি ও লুলাসহ ২৯ বিদেশি নেতা গাজায় ইসরাইলের অভিযানের বিরোধিতা চীনের রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে ফাইনালে ইন্টার যুদ্ধের প্রভাবে অনিশ্চিত বাংলাদেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ পাকিস্তানে নিরাপদেই আছেন নাহিদ-রিশাদ

কালিগঞ্জের প্রাকৃতিক বদ্বীপে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা ম্যানগ্রোভ বনায়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণের নতুন দিগন্ত

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৮ মে, ২০২৫

আহম্মাদ উল্যাহ বাচ্চু \ ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ইছামতি নদীর বুক চিরে গড়ে উঠা চরে প্রাকৃতিক বদ্বীপ এখনও টিকে আছে ভাঙা-গড়ার এক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে। এই বদ্বীপটি কালিগঞ্জ উপজেলার এক অনন্য ভূ-প্রাকৃতিক নিদর্শন, যা বর্তমানে পর্যটন শিল্পের এক বিশাল সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে পরিকল্পিতভাবে আদি যমুনা নদীর দুই তীর ও নদীচর সংলগ্ন এলাকায় ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ রোপণের মাধ্যমে যদি একটি বন সৃষ্টি করা যায়, তবে এটি শুধু পরিবেশগত ভারসাম্যই রক্ষা করবে না, বরং গড়ে তুলবে এক দৃষ্টিনন্দন ও টেকসই পর্যটন অবকাঠামো। নদীর দুই পারে রয়েছে জমিদারদের ফেলে যাওয়া বাড়িতে রিভার ড্রাইভ ইকোপার্ক, কাস্টম অফিস, তহশীল অফিস, বসন্তপুর খাদ্যগুদাম, দমদম খেয়াঘাট, বসন্তপুর ও শুলইপুর বিজিবি ক্যাম্পসহ উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা, যা পর্যটন বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ সব এলাকায় কেওড়া, গোলপাতা ও গেবু জাতীয় ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানো হলে গড়ে উঠতে পারে একটি প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ বন, যা সৌন্দর্যের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেঁড়িবাধের পাশে নারায়নপুর, কামদেবপুর ও বসন্তপুর মৌজার জমি ব্যবহার করে বনায়নের মাধ্যমে এই বনের স¤প্রসারণ সম্ভব। দমদম খেয়াঘাট সংলগ্ন নদীর দুই তীরে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে আদিযমুনা নদীর দুই তীরও সবুজে ঘেরা প্রকৃতি করে তোলা যাবে। সরকারি ভাবে এমন উদ্যোগে নিলে পাখির বসবাস উপযোগী একটি অভয়ারণ্য বা স্বর্গীয় পরিবেশ গড়ে উঠবে। যেখানে প্রতিদিন নানা প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকবে নদীর মাঝে গড়ে উঠা বদ্বীপ অঞ্চল। এমনি ভাবে গড়ে উঠতে পারে দেবহাটার রূপসী ম্যানগ্রোভ-এর আদলে ইছামতি, কালিন্দী ও আদি যমুনা নদীর পাশে সবুজ বেষ্টনীর এক অসাধারণ দৃশ্য। শুইলপুর গ্রামের মৃত মানিক গাজীর ছেলে সৈয়দ আলী গাজী (৯৫) বলেন, প্রায় ১০০ বছর পূর্বে ইছামতি নদীর বুকে গড়ে ওঠা দ্বীপটি আমি জম্মের পর থেকে দেখছি। প্রকৃতিক ভাবে তৈরী এই বনটি এক সময় অনেক বড় ছিল। সে সময় ভারতের হিঙ্গলগঞ্জের পাশে বিশাল বড় জেটি তৈরী করে করা হয়। এর ফলে ভারতের পারে পলি জমে চরের সৃষ্টি হওয়ায় বাংলাদেশে পারে ¯্রােত বেশী পড়ায় আস্তে আস্তে বনটি বিলুপ্ত হতে থাকে। সব প্রতিকুল কাটিয়ে বনটি আজও কোন রকম টিকে আছে। পরিবেশকর্মী এ্যাডঃ জাফরুল্লাহ ইব্রাহিম বলেন, উপজেলা সদরের সোহরাওয়ার্দী পার্ক হয়ে ইছামতি-কালিন্দী পর্যন্ত একটি নান্দনিক নৌপথ নির্মাণ করা গেলে পর্যটকদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতার দুয়ার খুলবে। বর্তমানে শুলইপুর-কামদেবপুর এলাকার বদ্বীপে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। তবে এসব পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করতে কৃত্রিম বনায়নের পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণের বাস্তবমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যান্ত জরুরী। এক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে নদীর তীরে পলি অপসারণ রোধ, রেনু আহরণকারীদের জাল টানা বা ফেলায় পলি জমতে না পারা। যার ফলে নদীর তলদেশ দুর্বল হয়ে ভাঙনের হার বেড়েই চলেছে। এর ফলে বসন্তপুর, কামদেবপুর, শুইলপুর, খারহাট, খানজিয়াসহ আশপাশের এলাকাগুলো পড়ছে ঝুঁকির মুখে। মাছের রেনু আহরণ বন্ধে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি একান্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি, নদীর তীরে বহুমুখী ও টেকসই বেরিবাঁধ নির্মাণের মাধ্যমেই বদ্বীপ অঞ্চলকে রক্ষা করা সম্ভব। বর্তমানে অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনেকেই বেআইনিভাবে মৎস্য চাষের জন্য বেড়িবাঁধ ফুটো করে পাইপ বসিয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের পথ তৈরি করছে, যা অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। বøক দিয়ে স্থায়ী ও পরিকল্পিত বেড়িবাঁধ নির্মাণ হলে একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে এলাকা রক্ষা পাবে। অন্যদিকে পর্যটনের মতো অর্থনৈতিক খাতও বিকশিত হবে। এর মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতি চাঙ্গা হবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। সব মিলিয়ে বলা যায়, কালিগঞ্জের ইছামতি নদীর মাঝে গড়ে উঠা প্রাকৃতিক বদ্বীপকে ঘিরে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে ম্যানগ্রোভ বনায়ন এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলা যায়, তবে এটি হয়ে উঠতে পারে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য একটি দৃষ্টিনন্দন, টেকসই ও লাভজনক পর্যটন কেন্দ্র। এখনই সময়, পরিবেশ সংরক্ষণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই যুগপৎ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করার। ইছামতি নদীর মাঝে গড়ে উঠা দ্বীপ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মন্ডল বলেন, সম্প্রতি জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ কালিগঞ্জের ইছামতির নদীর চরে জেগে উঠা দ্বীপটি ও বসন্তপুরের রিভার ড্রাইভ ইর্কো পার্ক পরিদর্শন করে বলেছেন, এই দ্বীপের নাম হওয়া উচিৎ মায়াবতি দ্বীপ এবং পর্যটকদের জন্য বসন্তপুর ইর্কো পার্কের সার্বিক উন্নয়নে পর্যপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হবে। এসময় ইপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিত কুমার বিশ^াসসহ অন্যান্য অফিসারবৃন্দ সাথে ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com