আন্তর্জাতিক ডেস্ক \ পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে ভারত। স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনী একযোগে এই হামলা চালিয়েছে। এতে কমপক্ষে ৩১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪৬ জন। পাকিস্তানের আইএসপিআরের ডিজি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ খবর দিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য ডন। এদিকে জবাবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতের বিমানবাহিনীর ৫টি যুদ্ধবিমান, একটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে। একই সঙ্গে একটি ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার ধ্বংস করেছে বলে খবর দিয়েছে অনলাইন জিও নিউজ। ভারত দাবি করেছে যে, তারা স্থানীয় সময় রাত ১টা ৪৪ মিনিটে পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের ভিতরে ‘সন্ত্রাসী’দের অবকাঠামোতে হামলা করেছে। এই অভিযান অব্যাহতভাবে মনিটরিং করছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিঁন্দুর’। মোট ৯টি স্থাপনায় এই হামলা চালানো হয়েছে। ভারতের এ হামলাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। পাকিস্তানের আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতের পর কোটলি, ভাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাগ ও মুজাফ্ফরবাদে ‘কাপুরুষোচিত’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে এর বদলা নিতে শুরু করেছে। ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর পাকিস্তানে জরুরি বৈঠক- ভারতের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানে ৯ জন নিহত হওয়ার পর দ্রæত প্রতিক্রিয়ায় গতকাল সকালে জরুরি বৈঠকে বসছে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি। স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় শুরু হতে যাওয়া এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফসহ নিরাপত্তা খাত সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মিডিয়া এই খবর জানায়। সামরিক মিডিয়ায় লাইভে সম্প্রচারিত খবরে জানানো হয়েছে, ভারতের হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই বৈঠক ডাকা হয়েছে। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এরআগে ভারত একযোগে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের নয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। দিল্লি দাবি করেছে, জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সম্প্রতি পর্যটকদের ওপর জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়ায় তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। পাকিস্তান ভারতীয় হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ আখ্যা দিয়ে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে। ইসলামাবাদ বলেছে, সময় ও স্থান বেছে এই হামলার ‘উপযুক্ত’ জবাব দেওয়া হবে। গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ক্রমেই অবনতির দিকে যায়। সীমান্তে প্রতিদিনই চলছে গুলিবিনিময় এবং উভয় দেশ বিভিন্ন কৌশলগত ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মুহূর্তে দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে। উল্লেখ্য, গত ২২শে এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি হয়। এর পর থেকে পারমাণবিক ক্ষমতাধর দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এ হামলা চালাল ভারত। পাকিস্তানের আইএসপিআরের মহাপরিচালক বলেন, ‘কাপুরুষ শত্রæ ভারত এখন থেকে কিছু সময় আগে ভাওয়ালপুরের আহমেদ ইস্ট এলাকার সুবহান্নাল্লাহ মসজিদ, কোটলি ও মুজাফ্ফরবাদের অন্তত তিন জায়গায় বিমান হামলা চালিয়েছে।’ হামলাগুলো ভারতের আকাশসীমা থেকে চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পাকিস্তান এর সমুচিত জবাব দেবে উল্লেখ করে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘এই ঘৃণ্য উসকানি জবাব ছাড়া পার পাবে না।’ তিনি জানান, আহমেদপুরে একটি মসজিদে হামলা হয়েছে। কাছের একটি বাড়িও আক্রান্ত হয়েছে। সেখানে একটি শিশু ও তার বাবা-মা আটকা পড়েছেন। তাদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। কোটলিতেও একটি মসজিদে হামলা হয়েছে। মুজাফ্ফরবাদে একটি সড়কে ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে। তাতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানি বাহিনী স্থল ও আকাশপথে এই হামলার জবাব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এদিকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কোনো স্থাপনাকে এই অভিযানে নিশানা করা হয়নি। পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মুজাফ্ফরাবাদে বুধবার গভীর রাতে বড় ধরনের একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একটি সম্ভাব্য নিশানা ছিল মুজাফ্ফরাবাদের বিলাল মসজিদ। ওই মসজিদের পাশেই বসবাস করেন মোহাম্মদ ওয়াহিদ। তিনি বলেন, আমার খুব ঘুম পাচ্ছিল এমন সময় প্রথম বিস্ফোরণে আমার বাড়িটা কেঁপে ওঠে। আমি দৌড়ে রাস্তায় বের হই। সেখানে দেখি অন্যরাও একই কাজ করছে। আমরা তখনও বুঝে উঠতে পারিনি কী হচ্ছে। এর মধ্যেই আরও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ও বিশৃংখলা দেখা দেয়। পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফ্ফরাবাদে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার একটি জায়গার আশপাশের বাসিন্দারা প্রাণ ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে আসেন। ওয়াহিদ বলেন, ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছেন এবং তাদের প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে ওয়াহিদ বলেন, ‘বাচ্চারা কাঁদছে, মহিলারা দৌড়াদৌড়ি করছে, তাঁরা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে। আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানিই না কী করব। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে, আর চারদিকে এক অজানা অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।’ তিনি বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি বুঝে উঠতে পারছিলেন না একটি মসজিদ কেন হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলো। ওয়াহিদ বলেন, ‘এটা তো সাধারণ একটা মসজিদ ছিল, যেখানে আমরা দিনে পাঁচবার নামাজ পড়তাম। আমরা এই মসজিদ ঘিরে কখনো সন্দেহজনক কিছু দেখিনি।’ অপরদিকে মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তান ও আজাদ কাশ্মিরের নয়টি স্থানে হামলা চালিয়েছে ভারত। এর জেরে কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণরেখায় দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাবর্ষণ হয়েছে। ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে কমপক্ষে ১০ জন নিহত ও ৩২ জন আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে বিবিসি। ভারতের বিমান হামলার পাল্টা জবাবে দেশ দু’টির মধ্যে কার্যত সীমান্ত হিসেবে পরিচিত এলাকায় পাকিস্তান যখন ভারী গোলাবর্ষণ শুরু করে, তখন এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়রা বিবিসিকে জানান, গুলিবর্ষণ সবচেয়ে বেশি হয়েছে পুঞ্চ ও মেন্ধার এলাকায়। বাড়ি ও দোকানপাটসহ অনেক ভবন গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুঞ্চের এক স্থানীয় সাংবাদিক জামরুদ মুঘল ফোনে বিবিসিকে বলেন, ‘বুধবার রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমরা বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি।’ তিনি বলেন, ’মানুষ পুরো রাত ঘুমাতে পারেনি। সবাই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় পালিয়ে গেছে। আমাদের স্থানীয় হাসপাতাল এখন আহত মানুষে ভরে গেছে।’ ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বেড়েই চলছিল। ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তান ও আজাদ কাশ্মিরের নয়টি স্থানে হামলা চালিয়েছে ভারত। জবাবে পাল্টা আক্রমণ করেছে পাকিস্তানও। ভারতের হামলায় পাকিস্তানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরো ৪৬ জন।