এফএনএস বিদেশ : মিয়ানমারে দেশটির জান্তা সরকারের বিমান হামলায় একটি স্কুল বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় ২০ শিশু ও দুজন শিক্ষকসহ অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। গত সোমবার দক্ষিণ—পূর্ব এশীয় দেশটির ভূমিকম্প বিধ্বস্ত অঞ্চলে মানবিক যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হওয়ার মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটলো। খবর এএফপির। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ মার্চের ভয়াবহ ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তর—পশ্চিমে অবস্থিত থেইন কুইন গ্রামের একটি স্কুলে স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ১০টার দিকে এই বোমা হামলা চালানো হয়। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের কাছে এই হামলার ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘স্কুল এমন একটি এলাকা হওয়া উচিত যেখানে শিশুরা নিরাপদে শিখতে পারবে, বোমা হামলার শিকার হওয়ার নয়।’ গত সোমবার বিকেলে বোমা হামলায় সবুজ রঙের স্কুল ভবনটি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে চূর্ণ—বিচূর্ণ হয়ে যায়। এর ধাতব ছাদ দুমড়ে—মুচড়ে যায় এবং ইটের দেওয়ালে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। বাইরে মিয়ানমারের পতাকা উড়ানো একটি খুঁটির সামনে পড়ে ছিল ডজনেরও বেশি স্কুলব্যাগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের এক ৩৪ বছর বয়সী শিক্ষক জানান, ‘এখন পর্যন্ত ২০ জন শিশু ও দুজন শিক্ষকসহ মোট ২২ জন নিহত হয়েছেন। আমরা শিশুদেরকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু যুদ্ধবিমানটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বোমা ফেলে যাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।’ সাগাইং অঞ্চলের একজন শিক্ষা কর্মকর্তাও একই সংখ্যক হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে জান্তা সরকার এই হামলার খবরকে ‘বানোয়াট’ বলে অভিহিত করেছে। এক বিবৃতিতে তারা দাবি করেছে, ‘বেসামরিক কোনো লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালানো হয়নি।’ উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী চলতি মে মাসজুড়ে দেশব্যাপী যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল গত ২৮ মার্চের ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর দেশ পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করা। ওই ভূমিকম্পে প্রায় তিন হাজার ৮০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। তবে এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরেও দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। ২০২১ সালে নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে জান্তা ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলছে। একদিকে জান্তা বাহিনী এবং অন্যদিকে বেশ কয়েকটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী দেশটির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ জানিয়েছিল, ভূমিকম্পের পর থেকে মিয়ানমারে ১৭১টি বিমান হামলাসহ কমপক্ষে ২৪৩টি সামরিক হামলায় দুই শতাধিক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।