বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
লক্ষ টাকার ৮ দলীয় নলতা শরীফ কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট ১ম রাউন্ডের ২য় খেলায় হাজিরপুর জয়ী আশাশুনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে আটক ২ বুধহাটায় বেওয়ারিশ অসহায় বৃদ্ধর মৃত্যু তালার প্রকৌশলী ও ঠিকাদার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ! সাতক্ষীরায় জামায়াতের বার্ষিক পরিকল্পনা ওরিয়েন্টেশন গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে খুলনার বিভাগীয় কমিশনারের মতবিনিময় বুধহাটা এবিসি কেজি স্কুলে বার্ষিক ফল প্রকাশ প্রতাপনগরে অগ্নিকাণ্ডে ৩টি ঘর ভস্মীভূত \ শতাধিক হাঁস মুরগীর মৃত্যু নূরনগরে অবৈধ বালি উত্তোলনের চেষ্টা, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বন্ধ আশাশুনির বড়দলে বিনা চাষে সরিষা আবাদে সাফল্য

সাতক্ষীরায় ছিলেন একজন নির্ভীক বিচারক কবি শেখ মফিজুর রহমান

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২২

আবু তালেব মোল­্যা \ একজন নির্ভিক বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ কবি শেখ মফিজুর রহমানকে পেয়ে ছিলেন সাতক্ষীরা। সময় বড়ই নির্মম, নিষ্ঠুর। চাকুরীর ক্ষেত্রে বদলি নামক পদ্ধতি বিধি বিধান সম্বলিত। কিন্তু কোন কোন সময় গনমানুষের ইচ্ছাশক্তির কাছে সেই বিধি মালা বদলি যেন বড্ড বেমানান। তেমনই এক আলোকিত বিচারক কবি শেখ মফিজুর রহমানের বদলি। ২০১৯ সালে ৩ এপ্রিল তিনি সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে যোগদান করেছিলেন, দেখতে দেখতে তিন বছর সতের দিন অতিক্রম করলেন। সাতক্ষীরার বিচার বিভাগের তিনি কেবল অভিভাবক ছিলেন না তিনি ছিলেন বার আর বেঞ্জের অনন্য অসাধারন সেতু বন্ধনের মূর্ত প্রতিক। দেশের আলোকিত, আলোচিত এই গুনি বিচারকের গতকাল ছিল সাতক্ষীরায় শেষ কর্ম দিবস। অন্যান্য দিনের ন্যায় গতকালও সাতক্ষীরা আদালত ছিল বিচারক, আইনজীবী, বিচার প্রার্থী সহ দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে ভরা। আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও চলেছে। কিন্তু সাতক্ষীরার আদালত পাড়ার সাথে সংশ্লিষ্টদের হৃদয়ে অব্যক্ত রক্তক্ষরন ছিল বিচারাঙ্গনের আলো ছড়ানো মানবিক বিচারকের বদলি জনিত ব্যথায়। তিন বছর সতের দিন দীর্ঘ সময় নয়, কিন্তু বদলি চাকরীর ক্ষেত্রে তিন বছর উত্তীর্ন হলে অন্যত্র বদলির নিয়ম আইন সিদ্ধ, বিধায় পুর্ণকালীন তিনি সাতক্ষীরায় যেমন বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করলেন অনুরুপ ন্যায় বিচার, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী বান্ধব আর মানবতা, সৃষ্টিশীলতার ক্ষেত্র বিস্তৃত ঘটিয়েছেন। তিনি কেবল ন্যায় বিচারক না, তিনি কবি, কবি মনন, কবি সত্ত¡া সম্মিলন বিদায়ী বিচারককে করেছেন অনন্য অসাধারন নির্ভীক বিচারক। ষাটের দশকের শেষে গোপালগঞ্জের নাটগ্রামে যে সূর্য উদিত হয়েছিল সেই সূর্যের মিষ্টি মধুর অমলিন কিরনে সাতক্ষীরার মানুষও সিক্ত হয়েছে। বিচারিক জীবন যাপনের শৃংখালাময় প্রথাগত নিয়মাবলীর বাধ ভেঙ্গে মানবতা বোধের দুর্বার দুর্দান্ত ইচ্ছাশক্তি সাতক্ষীরা জনমানবকে স্পর্শ করেছে। আর তাই জেলা বাসি দেখেছেন তাদের জেলা ও দায়রা জজ কবি শেখ মফিজুর রহমান, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, অনাথ অসহায় এতিমদের সঙ্গী হতে, সহায়তা করনে মানবতার মাঝে। করোনার মহামারীর দিনগুলোতে আদালত পাড়ার সাথে সংশ্লিষ্টদের, অসহায়, দুস্থ, কর্মহীনদের পাশে থেকেছেন। লিগ্যাল এইডের কার্যক্রম, বিনামূল্যে আইনী সহায়তার সরকারি সেবা জানাতে জনগনকে উদ্বুদ্ধ করনে তিনি শ্যামনগরের দুর্গম বুড়িগোয়ালীনি, হতে আশাশুনির প্রতাপনগর, শ্রীউলা, কলারোয়ার সোনাবড়ীয়া হতে তালার তেতুলিয়া, কালিগঞ্জের নাজিমগঞ্জ হতে দেবহাটা ছুটে চলেছেন। জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, সাধারন মানুষ, সুশিল সমাজের প্রতিনিধিদের জানান দিয়েছেন সরকার বিনামূল্যে সব শ্রেনীর মানুষকে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে বিনামুল্যে আইনী সহায়তা দিচ্ছে। এখানেই শেষ নয় নিজ উদ্যোগে তিনি লিগ্যাল এইডের সেবা গ্রহীতাদের আপ্যায়ন এবং যাতাযাত ভাড়া ব্যবস্থা করেছেন। সৃষ্টিশীলতার মানসপুত্র হিসেবে নিজেকে বির্নিমান করেছে খনজন্মা এই বিচারক \ জজ আদালত থেকে চীফ জুডিসিয়াল আদালতে যাতায়াতের সড়ক নির্মানের ব্যবস্থা, আদালত থেকে মুহুরী বার পর্যন্ত ঢালাই সড়ক নির্মান, বিচার প্রার্থী ও দর্শনার্থীদের বিশ্রাম আর বসার ব্যবস্থা ছায়াবীথি নির্মান আদালতের বরান্দায় বসার স্থান নির্মান যা অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং নান্দনিক আর সম্ভব হয়েছে সাতক্ষীরার জন বান্ধব সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজের ইচ্ছাশক্তির বদৌলতে। সাতক্ষীরার আদালতে মামলা জট হ্যাসে তিনি বিচারিক আর প্রশাসনিক কর্মযজ্ঞ অত্যন্ত দক্ষতা আর সহনশীলতার মাধ্যমে চলমান রেখেছেন। আমাকে দেখে নয়, আমাকে জেনে বিচার করার সেই অমর বাক্যের প্রতিধ্বনি বিচারিক কার্যক্রমকে স্পর্শ করেছে আর তাই বিচারকের সাথে প্রতারনার মামলার আসামীও জামিন পান। চাঞ্চল্যকর মামলার বিচার কার্যক্রম আর সময় যথাযথ ভাবে প্রতিফলিত হওয়ার বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছেন আদালতের সাথে সংশ্লিষ্ট ও প্রার্থীরা কলারোয়ার চার হত্যা মামলার বিচার নিশ্চিত পরবর্তি আসামীকে ফাঁসির আদেশ প্রদান। আশাশুনির চাঞ্চল্যকর চন্দ্রশেখর হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন করা, বন্ধু আসামী মোবাশশির হোসেনের যাবজ্জীবন সাজা প্রদান। শ্যামনগরের বাসস্ট্যান্ড ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাস্টবিনে পাওয়া নবজাতকের দত্তক দেওয়ার আদেশ। ধর্ষন মামলায় আদালতের বিবাহ রেজিষ্ট্রারের উপস্থিতিতে বিবাহ নিশ্চিতের মাধ্যমে মামলার দৃষ্টান্তমূলক নিষ্পত্তি করা। প্রধান মন্ত্রীর গাড়ীবহরে হামলা মামলার আপীল নিষ্পত্তিকরা। পরিস্থিতি, বাস্তবতা, মানবতা এবং বিচারকের মনন, মেধা বিবেচনা বোধ ও দুরদর্শিতা মামলা নিষ্পত্তি আর আদেশ অতি যুগোপোযোগী হয় তেমনই এক আদেশ দিয়ে তিনি অতি মানবিক এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, মামলাটি ছিল আম্ফানে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের জন্য সরকারি বরাদ্ধকৃত পুলিশ কর্তৃক জব্দকৃত চৌদ্দবস্তা গম ভাংগাইয়া রুটি তৈরী করে হত দরিদ্রদের মাঝে বন্টনের আদেশ দেন। আদেশটি কেবল স্বপ্রনোদিত না বলে যুগান্তকারী আদেশ বলা যায়। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নির্বাচন নিয়ে সদস্য বা দ্বিধাবিভক্ত এবং একে অপরের প্রতিপক্ষ হিসেবে মামলা দায়ের করে এবং মর্যাদাশীল প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি হুমুিকর মুখে পড়ে এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের পাশাপাশি সুশিলসমাজ সহ জেলাবাসি সর্বসম্মত এবং বিরোধ মিমাংসার ক্ষেত্র নিশ্চিত করে এমন আদেশ প্রত্যাশা করছিলেন। বিজ্ঞ আদালত এক্ষেত্রেও যুগান্তকারী এবং সব পক্ষের জন্য গ্রহনীয় আদেশ দিয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নির্বাচন এর পথ সুগম করেন যে আদেশ মর্যাদাশীল প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখে। মানবতার কল্যানের পুরোধা বিদায়ী বিচারক সাতক্ষীরার সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াঙ্গনেও আলোর বিচ্ছুরন ছড়িয়েছেন। সাতক্ষীরার সাহিত্য অঙ্গনে তিনি নতুন ধারা সংযোজনের পথিকৃত। কবিতার আসর, কবিতা পাঠের আসর, সাহিত্য সমালোচনা, সাহিত্যিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সম্মাননা জানানোয় সরব উপস্থিতি। সাতক্ষীরার মানুষের আস্থা বিশ্বাস নির্ভরতার প্রতিক হিসেবে যেমন নিজেকে চিহিৃত করেছিলেন অনুরুপ ভাবে সাতক্ষীরা বাসি গর্বিত কবির অমর সৃষ্টি নিরন্তর প্রতীক্ষা কাব্য গ্রন্থ সাতক্ষীরায় কর্মকালীন সময়ে প্রকাশিত। নিরন্তর প্রতীক্ষার কাব্যগ্রন্থের মনোমুগ্ধকর আবৃত্তি ইথারে ভাসছে, মুঠোফোনে গুনছেন সাহিত্য প্রেমীরা, কবিতা প্রেমীরা। কবি শেখ মফিজুর রহমান কেবল বিচারক হিসেবে নয় অতি মমতাময়ী কবি হিসেবে স্বরনীয় থাকবেন। ক্ষনস্থায়ী পৃথিবীতে কারও জন্য স্থায়ী নয়, যেমন সত্য ঠিক তদ্রুপ তিনি সাতক্ষীরাতে ছিলেন অতি অল্প সময় (তিন বছর সতের দিন) এই অল্প সময়ে তিনি নতুনের কেতন উড়িয়েছেন। ভাল থাকবেন, সাতক্ষীরা এই মহানুভবকে মনে রাখবেন। সাতক্ষীরার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, কর্মচারী, আইনজীবী বিচার প্রার্থী, সাহিত্যঙ্গন, ক্রীড়াঙ্গন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন, অসহায় দুস্থ মানবকুল মনে রাখবে। বাংলাদেশের কারা ব্যবস্থার সংস্কারের অগ্রদুত আর সাতক্ষীরার জনগোষ্ঠীর আত্মার আত্মীয় হিসেবে চির জাগ্রত থাকবেন। জনবান্ধব বিচারক অবশ্যই আত্মতৃপ্তি নিয়েই সাতক্ষীরা ছাড়ছেন। সাগর আর পাহাড় যতটুকু নিকটে দেখা যায় আসলে ততোটুকু নিকটে নয়। নির্ভীক বিচারক কবি শেখ মফিজুর রহমানের ক্ষেত্রে সাতক্ষীরা বাসি বলবেই তারা সাগর, পাহাড় আর দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ কাছেই পেয়েছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com