রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

মাহে রমজানের সওগাত

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০২২

এফএনএস : মাহে রমজানের আজ বিশতম দিবস। মাগফিরাতের দশকের শেষ দিবস। আগামীকাল থেকে শুরু হবে নাজাতের দশক। মাহে রমজানের শেষ দশ দিন। আজ সূর্যাস্তের আগেই ই’তিকাফ শুরু করবেন অনেকে। ই’তিকাফের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, কোনো জিনিসকে আঁকড়ে ধরা এবং এর উপর নিজ সত্তা ও আত্মাকে আটকে রাখা। আর পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে, আল­াহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তির মসজিদে বাস ও অবস্থান করা। সকল সময় ই’তিকাফ জায়েজ। তবে রমজান মাসে উত্তম এবং রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশের উদ্দেশ্য তা সর্বোত্তম। ই’তিকাফ এমন এক নির্জনতা যেখানে ব্যক্তি আল­াহর ইবাদত, জিকির ও আনুগত্যের উদ্দেশ্য নিজের আত্মা ও সত্তাকে একান্তভাবে নিয়োজিত করে এবং নামায, রোযা, কোরআন তেলাওয়াত, ইসলামি জ্ঞান চর্চা ও গবেষণায় নিজেকে সম্পূর্ণ ব্যস্ত রাখে। একই কারণে তিনি দুনিয়ার সকল কাজ ও ব্যস্ততা থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দূের থাকেন। অল­¬াহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের পথে যেন কোনো দুনিয়াবী চিন্তা ও কাজ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে। ই’তিকাফ কিছুতেই বৈরাগ্যবাদ নয়। বৈরাগ্যবাদ স্থায়ী জিনিস আর ই’তিকাফ হচ্ছে সাময়িক। ই’তিকাফের উদ্দেশ্য হলো সৃষ্টির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং স্রস্টার সাথে সম্পর্ক কায়েম করা। আল­¬াহর সাথে পরিচয় যত গভীর হবে, সম্পর্ক ও ভালবাসা ততো গভীর হবে এবং তা বান্দাকে পুরোপুরি আল­¬াহর কাছে নিয়ে যাবে। আল­¬াহর পথে যাত্রা অব্যাহত রাখা নির্ভর করে যোগ্য ও সঠিক মনের উপর। মন শত বিচ্ছিন্ন থাকলে সে পথে অগ্রসর হওয়া যায় না। সে জন্যই মনকে আল­¬াহর দিকে ধাবিত করা দরকার। অথচ অতিরিক্ত পানাহার, মানুষের সাথে অতিরিক্ত মেলামেশা, বেহুদা ও বেশি কথাবার্তা এবং অতিরিক্ত ঘুম মনকে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত করে রাখে এবং ব্যক্তিকে সকল উপত্যকায় বিচরণ করায়। সে জন্য আল­¬াহর পথে যাত্রা বাঁধা প্রাপ্ত হয় কিংবা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই মেহেরবান আল­াহ রোজার মাধ্যমে অতিরিক্ত পানাহার ও যৌন কামনাকে রোজার বিধানের মাধ্যমে দূর করার ব্যবস্থা করেছেন। আর ই’তিকাফের উদ্দেশ্য হলো, আল­াহর ব্যাপারে মন নিবিষ্ট করা, তাঁর সাথে নির্জনে বাস করা এবং স্রস্টার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি থেকে দূরে অবস্থান করা যাতে করে তার চিন্তা ও ভালবসা মনে স্থান করে নিতে পারে। রাসূলুল­াহ (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল­াহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য একদিন ই’তিকাফ করে, আল­াহ সেই ব্যক্তি ও দোজখের মধ্যে ৩ খন্দক পরিমাণ দূরত্ব সৃষ্টি করেন।’ প্রত্যেক খন্দক পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বের চাইতে আরো বেশি। রাসূলুল­াহ (সা:) আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানে ১০ দিন ই’তিকাফ করে, তা দুই হজ্জ ও দুই ওমরার সওয়াবের সমান। ই’তিকাফকারী গুনাহ থেকে বিরত থাকে। তাকে সকল নেক কাজের কর্মী বিবেচনা করে বহু সওয়াব দেয়া হবে।’ ই’তিকাফ সুন্নাত। রমযানের শেষ দশ রাত্রে লাইলাতুল কদর অনে¦ষণে ই’তিকাফ করার বিধান চালু হয়েছে। কিন্তুু ই’তিকা ফের মান্নত করলে তা পালন করা ওয়াজিব হবে। রমজান ছাড়াও যে কোন সময় মসজিদে অনির্ধারিত সময়ব্যাপী ই’তিকাফ করা যায়। পবিত্র কোরআন মজীদে আল­াহ বলেছেন, ‘আমার ঘরকে তাওয়াফ ও ই’তিকাফকারীদের জন্য পবিত্র রাখো। ‘রাসূলুল­াহ (সা:) রমানে ১০ দিন ই’তিকাফ করতেন। কিন্তুু ইন্তেকালের বছর তিনি ২০ দিন ই’তিকাফ করেন।’ হজরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল­া (সা:) আমৃত্যু রমজানের শেষ দশকে ই’তিকাফ করতেন। আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল­াহ (সা) বলেন: ‘যে মসজিদে জামাআত হয় সে মসজিদ ছাড়া ই’তিকাফ হবে না। মূলকথা, ই’তিকাফ যত নির্জন হয় এবং লোকজনের সাথে মেলামেশা যত কম হয় ততই ভাল। ই’তিকাফকারী আল­াহর কাছে নীরবে একাকী দোয়া ও কান্নাকাটি করবে এবং ইবাদত করবে। ই’তিকাফের মোস্তাহাব বিষয় হচ্ছে, বেশি বেশি নামায পড়া, কোরআন তেলাওয়াত, অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ তাফসীর পড়া এবং ইসলামি সাহিত্য ও বই পুস্তক পড়া, অর্থাৎ দ্বীনী এলেম অর্জন করা। বেহুদা কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা। ঝগড়া ঝাটি এবং গাল-মন্দ না করা। মসজিদের একটি অংশে অবস্থান করা। ই’তিকাফকারীর জরুরি কাজের জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়া জায়েজ আছে। আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন ঃ ই’তিকাফকারীর জন্য সুন্নাত হল ,রোগী দেখতে না যাওয়া, জানাজায় অংশগ্রহণ না করা, স্ত্রী সহবাস না করা এবং খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মসজিদ থেকে বের না হওয়া। ই’তিকাফের বিরাট সওয়াব ও মর্যাদা লাভ করার জন্য সবারই সচেষ্ট হওয়া দরকার। বিশেষ করে তা মসজিদে, রমজানে এবং রমজানের শেষ দশকে হলে এর মর্যাদা বহু বহু গুণ বেশি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com