এম এম নুর আলম \ আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গ্রীষ্মের শুরুতেই সুপেয় খাবার পানির হাহাকার দেখা দিয়েছে। উপজেলাজুড়ে মাছের ঘেরের পানি থইথই করলেও সুপেয় পানির সংকট সর্বত্র। এক কলসি পানি আনতে দুই থেকে চার কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটতে হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে দীর্ঘ লাইনে। অবস্থা দিনদিন প্রকট হচ্ছে। মিলছে না সমস্যার সমাধান। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এর হিসাব অনুযায়ী আশাশুনিতে বর্তমানে সুপেয় পানির জন্য উপজেলায় ২ হাজার ২৯১টি গভীর নলকূপ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্ল্যান্ট ২ হাজার ৪৪৮টি, পুকুরের পাড়ে পানির ফিল্টার (পিএসএফ) ১৪২টিসহ খাবার পানির জন্য ৭ হাজার ৮৪১টি পানির প্ল্যান্ট চালু রয়েছে। তবে কতগুলো গভীর নলকূপ নষ্ট আছে, তার পরিসংখ্যান দিতে পারেনি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এদিকে, উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে বুধহাটা, কুল্যা, দরগাপুর, বড়দল, খাজরা ও কাদাকাটি ইউনিয়নে গভীর নলকূপ বসালেও পানযোগ্য পানি পাওয়া যায় না। আনুলিয়া, শ্রীউলা ও আশাশুনি সদর ইউনিয়নে কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া গভীর নলকূপ বসানো যায় না। শুধু শোভনালি ও প্রতাপনগর ইউনিয়নে গভীর নলকূপের মাধ্যমে সুপেয় পানি পাওয়া যায়। শুক্রবার আশাশুনি উপজেলার পাইথালী কুন্দুড়িয়া মোড়ে দেখা যায়, পানির জন্য দুই শতাধিক নারী-পুরুষ লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। ১৫ বছর আগে একটি বেসরকারি সংস্থা পুকুর থেকে পানি ফিল্টারিংয়ের প্ল্যান্ট তৈরি করে দেয় সেখানে। সেখান থেকে কুন্দুড়িয়া, পাইথালী, বাঁকড়া, নৈকাটি, হাজিডাঙ্গাসহ ১০-১৫টি গ্রামের ৪০০ থেকে ৫০০ মানুষ পানি নিতে আসে প্রতিদিন। এখান থেকে পানি নিতে হলে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৫০ টাকা দিতে হয়। সেই টাকা দিয়েই পরিশোধ করা হয় ওই প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ বিল ও অন্যান্য খরচ। দুপুরের দিকে যেয়ে দেখা যায় দুই শতাধিক কলসির লাইন। প্রতিদিন এখান থেকে একটি পরিবার দু-তিন কলসি পানি নিতে পারে। পানি নিতে আসা গৃহবধূরা জানান, কলের পানিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, পান করা যায় না। তাই পুকুরের ফিল্টার করা পানি নিতে আসেন প্রতিদিন। চৈত্র মাসে পুকুরে পানি থাকে না। ফলে দুরবস্থার সীমা নেই। পানির প্ল্যান্টে দায়িত্বরত কর্মচারী প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, স্থানীয় একটি পুকুর থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি আনা হয়। ১৫টি গ্রামের মানুষ এখানে পানি নিতে আসে। চৈত্র মাসে পুকুরে পানি থাকে না। ওই সময়ে সমস্যা আরও প্রকট হয়। আশাশুনি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আশাশুনিতে খাবার পানির সংকট বহু বছর ধরে। পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য ছয় হাজার পরিবারকে ছয় হাজার ট্যাংক দেওয়া হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও খাবার পানির সংকট দূর হবে। এ ছাড়া উপকূলীয় ১০ জেলায় খাবার পানির সংকট নিরসনে সরকারিভাবে এক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, আগামী জুন মাসে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে পানির সংকট কমে যাবে।