এফএনএস : এবারের ঈদ যাত্রায় কালবৈশাখীর ঝুঁজিতে নৌপথের যাত্রীরা। বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনা প্রতি বছরই মলিন করে দেয় ঈদ আনন্দ। নৌপথেও একই অবস্থা। ইতোমধ্যে নৌপথগুলোয় ফিট নৌযানের পাশাপাশি আনফিট নৌযান চলাচল শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু কালবৈশাখীর চোখ রাঙানিতেও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সেদিকে কোনো নজর নেই। রাজধানীর সদরঘাট থেকে সাধারণ সময়ে প্রতিদিন গড়ে ৮০টি লঞ্চ চলাচল করলেও ঈদযাত্রায় প্রায় ২০০ লঞ্চ চলাচল করছে। নৌপথের সুষ্ঠু যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে। ওসব নির্দেশনার মধ্যে টিকিট কেনার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ঈদের আগে ও পরের ৫দিন লঞ্চে মোটরসাইকেল পরিবহন করা যাবে না। একই সাথে ওই সময় নদীতে কোনো বালিবাহী ট্রলারও চলাচল করতে পারবে না। তাছাড়া অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কাগজে-কলমে ওসব নির্দেশনা দেয়া হলেও তার অনেক কিছুই মানা হচ্ছে না। ফলে চলতি মৌসুমে বৈশাখী ঝড় মাথায় নিয়ে লঞ্চযাত্রার বিষয়টি যাত্রী ও লঞ্চসংশ্লিষ্টদের ভাবিয়ে তুলছে। বিআইডব্লিউটিএ এবং নৌযান সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বৈশাখী ঝড় মাথায় নিয়েই এ বছর যাত্রীদের ঈদযাত্রার ঘরে ফেরা শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই নৌযানে যাতে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই না হয় সেদিনে বিআইডব্লিউটিএ, লঞ্চ মালিক, চালক, কর্মচারী, যাত্রী সবার সতর্ক হওয়া জরুরি। কিন্তু নৌযানে বাড়তি সতর্কতা না থাকার বিষয়টিই বিভিন্ন সূত্রে উঠে এসেছে। নৌযান সংশ্লিষ্টদর মতে, নৌপথে কালবৈশাখী সব সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। ঝড়ের কবলে পড়লে লঞ্চ চালানোর যে নির্দেশনা রয়েছে তা মেনে চললে দুর্ঘটনার শঙ্কা কম থাকে। কিন্তু ঈদে নৌযানে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই হওয়ায় এবার ঝুঁকিও বেশি থাকবে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বিআইডব্লিউটিএর লোকজন মাঝে মাঝে এসে খোঁজখবর নিয়ে যায়। কিন্তু ঈদে যে পরিমাণ লঞ্চের সংখ্যা বেড়েছে, সে অনুপাতে তদারকি কম হচ্ছে। ফলে অনেক ফিটনেসবিহীন লঞ্চও চলাচল করছে। আবার অনেক অদক্ষ মাস্টারও লঞ্চ চালাচ্ছে। ত্র“টিপূর্ণ লঞ্চগুলো যখন নদীতে নামবে এবং বিপদের সম্মুখীন হবে, তখন দুর্ঘটনার শঙ্কা বেড়ে যাবে। সূত্র জানায়, ঈদের সময় বাল্কহেডগুলো নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। কারণ ওই নৌযান লঞ্চ চলাচলে বেশ সমস্যা তৈরি করে। তাছাড়া নৌপথের অনেক জায়গায়ই নাব্যতা সংকট রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর উচিত ছিল রোজার আগেই নাব্যতা সংকট দূর করে ঈদযাত্রা সুষ্ঠু করা। বর্তমানে প্রতিটি লঞ্চে প্রবেশের পথেই একটি তালিকা রয়েছে। তালিকায় যাত্রীর ধারণক্ষমতাসহ লঞ্চে থাকা নিরাপত্তাসামগ্রীর পরিমাণ উলেখ রয়েছে। কিন্তু যে পরিমাণ বয়া, লাইফ জ্যাকেট ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের কথা তালিকায় বলা আছে, তা লঞ্চ ও যাত্রীর তুলনায় নিতান্তই কম। আবার কোনো কোনো লঞ্চে নিরাপত্তাসামগ্রীর যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে বাস্তবে তা নেই। বলা যায় বিষয়টি তালিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অথচ নৌযান আইনে পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপত্তাসামগ্রী রাখা বাধ্যতামূলক। বিআইডব্লিউটিএ এ ক্ষেত্রে নীরব দর্শকের ভ‚মিকায় রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর লঞ্চগুলোয় পর্যাপ্ত পরিমাণ অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখা ও নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন হওয়ার নির্দেশনা জারি করে সরকার। কিন্তু বেশির ভাগ লঞ্চের ইঞ্জিন রুমের বাইরে আর কোথাও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা খুঁজে পাওয়া যায় না। এদিকে সার্বিক বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক জানান, প্রতিবারের মতো এবারো বিআইডব্লিউটিএ বিশেষ নির্দেশনা ও তদারকি অব্যাহত রেখেছে। কোথাও অনিয়ম দেখলেই মামলা করা হচ্ছে। তবে সুষ্ঠু ঈদযাত্রার জন্য যাত্রীদেরও সহযোগিতা করতে হবে। নয়তো এত বিশালসংখ্যক যাত্রীকে সেবা দেয়া দুরূহ হয়ে পড়বে।