সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশনের ক্ষমতা কুক্ষিগতকারী বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বলসহ দুর্নীতিবাজদের বিচারের দাবীংেত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ সাতক্ষীরা শহর শিবিরের উদ্যোগে আন্ত:থানা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের কমিটি গঠন আশাশুনি সমাজ কল্যাণ পরিষদে অর্থে ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও অনুদান বিতরণ নূরনগর আমীরের শপথ মজলিশে শূরা নির্বাচন ও কর্ম পরিষদ গঠন আশাশুনি টঙ্গী ইজতেমায় হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন সাতক্ষীরা উলামা পরিষদের মানব বন্ধন সাতক্ষীরায় কৃষি ঋণ কমিটির সভা নেহালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসুস্থ ছাত্রীর বড়ীতে \ উচ্ছ্বাসিত শিক্ষার্থী পরিবার বটিয়াঘাটায় ইজতেমায় হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

বড় ধরনের ভ‚মিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলায় পিছিয়ে বাংলাদেশ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ৭ মে, ২০২২

এফএনএস : দেশে ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভ‚মিকম্পে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বড় মাত্রার ভ‚মিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আছে। সা¤প্রতিককালে বড় মাত্রার ভ‚মিকম্প না হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ভ‚মিকম্পের তেমন কোনো পূর্বাভাস ব্যবস্থা নেই। সেজন্য দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বড় মাত্রার ভ‚মিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ, সেটা হতে পারে যে কোনো সময়।কিন্তু ঝুঁকি থাকলেও তা মোকাবিলার প্রস্তুতিতে অনেকটাই পিছিয়ে বাংলাদেশ। বহু পুরোনো ভবন, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করাÑভ‚মিকম্প ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, ভ‚মিকম্প পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষিত জনবলেরও সংকট রয়েছে। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ভ‚মিকম্পের ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চলে রয়েছে। অতীতে বড় ধরনের ভ‚মিকম্প বাংলাদেশ ও আশপাশে হয়েছে। তাই ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বড় ধরনের ভ‚মিকম্প হতে পারে। এটা কিন্তু হবে। বাংলাদেশের আশপাশে ভ‚মিকম্পের ইপি সেন্টার বা কেন্দ্র আছে। এই কারণে ৭ মাত্রার বেশি ভ‚মিকম্পের ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। তবে এটা কবে হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন ও ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেন্ট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জিল­ুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ৭ মাত্রার মতো বড় ভ‚মিকম্প হয়েছে মানিকগঞ্জে ১৮৮৫ সালে। এটার নাম ছিল বেঙ্গল আর্থকোয়াক। আরেকটা হয়েছে শ্রীমঙ্গলে ১৯১৮ সালে, এটার নাম শ্রীমঙ্গল আর্থকোয়াক। শ্রীমঙ্গল আর্থকোয়াকের উৎপত্তিস্থলের আশপাশে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ১৮৮৫ সালের ভ‚মিকম্পে টাঙ্গাইল, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। তবে ওই ভ‚মিকম্পে ঢাকা শহরের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সাধারণত ৭ মাত্রার ভ‚মিকম্পের কেন্দ্র যদি কোনো স্থানের ১০০ কিলোমিটার দূরে হয় তাহলে ওই স্থানের ক্ষয়ক্ষতি কম হয় জানিয়ে এই ভ‚তত্ত¡ বিজ্ঞানী বলেন, ১৮৯৭ সালের ১২ জুন ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়াক’ ভারতবর্ষে আঘাত হানে। গবেষকরা এখন হিসাব করে বের করেছেন, এটার মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ১। ওই ভ‚মিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ভারতের মেঘালয়ের শিলং শহর। ওই ভ‚মিকম্পে ঢাকা শহরেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এতে প্রমাণ হয়, বাংলাদেশে বড় ধরনের ভ‚মিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। ড. জিল­ুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ তিনটি প্লেটের বাউন্ডারির কাছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বড় কোনো ভ‚তাত্তি¡ক চ্যুতি (ফল্ট) আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি। বাংলাদেশের বাইরে সীমান্ত সংলগ্ন ফল্ট আছে। ত্রিপুরা, মিজোরাম, ডাউকিতে ফল্ট রয়েছে। তিনি বলেন, ভ‚মিকম্পের বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের উত্তর এবং পূর্বাংশের শহরগুলো। রংপুর, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ এলাকায় ভ‚মিকম্পের ঝুঁকি বেশি। ভ‚মিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জিল­ুর রহমান আরও বলেন, আমাদের অবকাঠামোগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা ভ‚মিকম্প সহনীয় ভবন করি না। এ ছাড়া অনেক পুরোনো ভবন রয়েছে। এসব ভবন অরক্ষিত (ভালনারেবল), বিপদ (হ্যাজার্ড) আছে- তাই ঝুঁকি তো থাকবেই। অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণের কারণে আমরা নিজেদেরকেই ঝুঁকিতে ফেলেছি। আর ভ‚মিকম্প মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি অত্যন্ত নাজুক বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, বাংলাদেশকে ভ‚মিকম্প সহনীয় দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে জাপানের সঙ্গে চার দফা মিটিং হয়েছে। আমাদের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক তৈরি হয়েছে। সেই অনুযায়ী তিনটি ধাপে বাংলাদেশকে ভ‚মিকম্প সহনীয় রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। আমরা ফোকাল পারসন নিয়োগ দিয়েছি, কার্যক্রম এগোচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রথম দফায় তারা সচেতনতা বাড়াতে কাজ করবেন। দ্বিতীয় দফায় ১০০/২০০ বছরের পুরোনো যেসব বিল্ডিং আছে, সেগুলো ধ্বংস করে জাপানের আর্থিক সহায়তায় ভ‚মিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া স¤প্রতি যেসব ভবন তৈরি করা হয়েছে সেগুলো ভ‚মিকম্প সহনীয় কি না তা পরীক্ষার করে সংস্কার করা হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা-১ অনুবিভাগ) রঞ্জিৎ কুমার সেন বলেন, ভ‚মিকম্প ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় ভলান্টিয়ার গ্র“প করা হয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণসহ কিছু অত্যাবশকীয় সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ইর্মাজেন্সি অপারেশন সেন্টার রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র (এনডিআরসিসি)। বড় পরিসরে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (এনওইসি) করা হচ্ছে, তেজগাঁওয়ে জায়গা নেওয়া হয়েছে। চীনের সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো এমওইউ হবে। এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। রঞ্জিৎ কুমার সেন আরও বলেন, এনওইসি প্রকল্পের অধীনে ভ‚মিকম্প মোকাবিলায় হেলিকপ্টার, হোভারক্রাফটসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি কেনা হবে। আমরা ভ‚মিকম্পের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য নিয়মিত মহড়া করছি। গত ৯ মার্চ একটি বড় সেমিনার করেছি। সেখানে আমাদের প্রস্তুতিতে কী ঘাটতি রয়েছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের ন্যাশনাল রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রাম (এনআরপি) রয়েছে। অগ্নিকান্ড, ভ‚মিকম্প ও বন্যা নিয়ে মূলত কাজ করা হয়। ফায়ার সার্ভিস ভ‚মিকম্প নিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সভা, সেমিনারসহ জনগণকে সচেতন করার কাজ করছি। অন্যান্যের সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে কাজ করা হচ্ছে। তবে আমাদের জন্য বড় ঝুঁকি হচ্ছে ভবনগুলো। অতিরিক্ত সচিব বলেন, জাপানের মতো বাংলাদেশেও ভ‚মিকম্পের আগে পূর্বাভাস দেওয়া যায় কি না সেটা স্টাডির পর্যায়ে আছে। বুয়েট, আবহাওয়া অধিদপ্তর, জাপান সরকার ও রাজউক মিলে এ বিষয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) মেনে চলতে পারলে মাঝারি মাত্রার ভ‚মিকম্পে নতুন ভবনগুলো ধসে পড়ার ঝুঁকি থাকবে না। এটা সবাইকে মেনে চলতে হবে, বলেন রঞ্জিৎ কুমার সেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ‚মিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে মানার কোনো বিকল্প নেই। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো দ্রুত ভেঙে ফেলতে হবে। বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক গড়ে তুলতে হবে, উদ্ধারকারী সংস্থাগুলোর জনবল বাড়াতে হবে। তারা আরও বলেন, ভ‚মিকম্প নিয়ে মানুষকে সচেতন করা খুবই জরুরি। পাঠ্যসূচিতে ভ‚মিকম্পসহ দুর্যোগ মোকাবিলার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে বলে মত দেন তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com