এফএনএস: দেশের আমদানি-রফাতানি বাণিজ্যের দ্বিতীয় লাইফ লাইন মোংলা বন্দর রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে যাচ্ছে। এজন্য খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ইতোমেধ্যেই রেললাইন টেলি কমিনিকেশন সিগানালিং ও রূপসা নদীতে সেতু নির্মাণসহ প্রকল্পের সার্বিক কাজ ৯২ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ হলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেল পথের উদ্বোধন করবেন বলে আশা করছে রেলওয়ে বিভাগ। এর মধ্যদিয়ে বিশ্বের রেল সংযোগবিহীন একমাত্র আর্ন্তজাতিক সমুদ্র বন্দরের দুর্নাম ঘুচবে মোংলা বন্দরের। ৬৪ দশমিক ৭৫০ কিলোমিটার খুলনা-মোংলা ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণে ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাড়াতে খুলনা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পটি গত ২০১০ সালে ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদর পায়। জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন ও রেলসেতু নির্মাণসহ সমগ্র প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এরপর পাঁচবার সময় বাড়িয়ে সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৪ দশমিক ৭৫০ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ কাজ শেষের মধ্যদিয়ে মোংলা সমুদ্র বন্দরকে বিদ্যমান রেলওয়ে নেটয়ার্কেও সঙ্গে সংযুক্ত করা সম্ভব হবে। এ প্রকল্পের ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘ইরকন ইন্টারন্যাশনাল’র প্রজেক্ট ম্যানেজার বলরাম দে জানান, খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ছোট বড় মিলিয়ে ৩১টি ব্রিজ ও ১০৮টি কালভার্ট নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। রূপসা নদীর ওপর রেলসেতুর কাজ ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। পাইলিংয়ের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এরপর মাত্র দুটি স্প্যান জোড়া লাগবে। এ ছাড়া এখনো ৯টি রোড আন্ডরপাসের কাজ বাকি আছে। এগুলোর নকশা হাতে এলেই দ্রুত কাজ শেষ করা হবে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. আরিফুজ্জামান জানান, রেলপথের কিছু অংশ, রেল সেতুর পাঁচ শতাংশ ও ফিনিশিং ওয়ার্ক বাকি আছে। তবে নতুন ডিজাইনের ৯টি রোড আন্ডারপাস নির্মাণ, পাইলের লেনথ সংখ্যা বৃদ্ধি ও মাটির কাজসহ নতুন কিছু কাজ সংযোজন হয়েছে। তাই পূর্বের ১০০ শতাংশ কাজের সঙ্গে আরও ১২ শতাংশ কাজ বেড়েছে। বর্তমানে রেললাইনের মূল ভৌত অবকাঠামো কাজ ৯২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে। করোনা (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে যথা সময়ে ভারত থেকে মালামাল না আসাসহ নানা সংকটে শুরুতেই নির্মাণ কাজে দেরি হয়েছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মূসা বলেন, আগামী ডিসেম্বরে চলমান এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিশ্বের রেল সংযোগবিহীন একমাত্র আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দরের দুর্নাম ঘুচবে মোংলা বন্দরের। মোংলা বন্দরের গতি আরও সঞ্চার হবে। আর পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকার সব থেকে কাছের এই বন্দর দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য কয়েকগুণ বাড়বে। তিনি আরও বলেন, এই রেলপথ মোংলা বন্দরের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড় ও বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতে শিলিগুড়িকে রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করবে। ফলে দেশসহ কম খরচে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। এতে এই বন্দরের আমদানি রফতারি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কন্টেইনার সার্ভিসও বাড়বে।