জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন শিশু পরিবারের নিবাসীদের কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্বনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা হচ্ছে। সরকারি পৃষ্টপোষকতায় চলছে এই কার্যক্রম। এর আলোকে বেকারত্বের অভিশাপ ঘূচাতে হাতে কলমে শিখিয়ে দক্ষ করা হচ্ছে নিবাসীর অসহায় এসব শিশুদের। তাদের কর্মক্ষম মানষিকতা তৈরি করে দিতে ১২ ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলোর তত্বাবধানে। এ ছাড়া নিবাসির যেসব শিক্ষার্থী দুর্বল, লেখাপাড়ায় অমনোযোগী অথবা উপরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পারে না তাদের জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তা ছাড়া শিশু পরিবারের এতিম শিশুদের শারীরিকভাবে সুঠাম রাখতে সরকার দফায় দফায় বাড়িয়েছে মাসিক বরাদ্দ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নথি পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বর্তমান প্রযুক্তিবান্ধব সরকার। মানুষকে কর্মক্ষম করে গড়ে তুলতে নানামুখি উদ্যোগ নিয়েছে। সমাজসেবার অধীন অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো সমাজের পিছিয়ে পড়া জন-গোষ্ঠীকে আত্বনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখছে। সংসদীয় কমিটি কাজ করতে গিয়ে দেখেছে, অনেক শিশু পরিবারের নিবাসি লেখাপড়ায় অমনোযোগী এবং বার বার পরীক্ষা দিয়েও উত্তীর্ণ হতে পারছে না। এই দুর্বলতার কারণে এসব শিশুরা যাতে হতাশাগ্রস্ত না হয়ে পড়েন, – সেজন্য তাদের জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । নথির তথ্যমতে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সমাজসেবা অধিদফতরের পরিচালিত সরকারি শিশু পরিবারের নিবাসিদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। নিবাসের একজন শিশুও যাতে বাস্তব জীবনে সুযোগ-সুবিধার অভাবে শিক্ষা থেকে ঝরে না পড়ের সেজন্য নানামুখি সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে সরকার ও সংস্থাগুলো। শিশু নিবাসের যেসব শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষায় ভাল নয় তাদের প্রতি যতœশীল বেশি সরকার। এ লক্ষ্যে লেখাপড়ায় অমনোযোগী অথবা উপরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পারে না তাদের জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে। এসব শিক্ষার্থী যতদিন কর্মক্ষম না হবেন ততদিন পর্যন্ত তাদের পাশে থাকবে সরকার। এ ছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক (ভোকেশনাল) শিক্ষায় নিয়োজিত নিবাসিদের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। এই জন্য সরকারি শিশু পরিবারের নিবাসিদের হাতে কলমে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণভিত্তিক উৎপাদন কার্যক্রমের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। তাদের লক্ষ্য, – একজন শিশু যাতে নিজেদের অসহায় ও অক্ষম না ভাবেন। সেজন্য সরকারি পৃষ্টপোষকতায় সর্বদা শিশু পরিবার নিবাসিদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। যতদিন তারা নিজেরাই কর্মক্ষম ও কারিগরি শিক্ষায় যোগ্য মনে না করবেন ততদিন পর্যন্ত হাতে কলমে শিক্ষা দেয়ার পথ উন্মুক্ত রাখা রেখেছে কর্র্তৃপক্ষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি শিশু পরিবারের নিবাসিদের লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন যুগোপযোগী কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে আত্বনির্ভরশীল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে। এ ধরণের পাঁচটি প্রাক-বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে, এগুলো হচ্ছে রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও ও আজিমপুর, চাঁদপুরের বাবুরহাট, রাজশাহী ও বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটের মূলঘর। এসব শিশু পরিবারের নিবাসিদের প্রযুক্তিনির্ভর কারিগরি ও হাতে-কলমে একডজন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণের ধরণসমূহ হচ্ছে, কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্কিল বাড়ানো, টাইপ ও শর্টহ্যান্ড, সেলাই ও এমব্রয়ডারী, উলবুনন, ব্লক-বাটিক অ্যান্ড স্কীন প্রিন্টিং, পোল্ট্রি অ্যান্ড ভেজিটেবল গার্ডেনিং, কার্পেন্ট্রী, হেয়ার ড্রেসার, ওয়েলডিং অ্যান্ড সীটমেটাল, ইলেকট্রিক ও হাউজ ওয়্যারিং, ইলেকট্রনিকস, কমার্শিয়াল আর্ট, লেদার ওয়ার্কস এবং বাঁশ ও বেত। এদিকে, দেশের ৮৫টি সরকারি শিশু পরিবার এবং ৫টি প্রাক-বৃত্তিমূলক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনার আলোকে বেশ কিছুৃ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের কারিকুলাম অনুসরণপূর্বক ট্রেডের মেয়াদ ও ধরণ নির্ধারণ, যুগোপযোগী এবং স্থানীয় চাহিদার অনুযায়ী ট্রেড নির্বাচন, দক্ষতাবৃদ্ধিকরণ এবং বিশেষ ক্ষেত্রে আউটসোসিংয়ের ভিত্তিতে দক্ষ প্রশিক্ষক নিয়োগ প্রদান। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, শিশু পরিবার ও নিবাসিদের পাশাপাশি এতিম শিশুদের জন্য সরকার নানামুখি উদ্যোগ নিচ্ছেন। স্বাধীনতা পূর্ব-সময় থেকে এই কার্যক্রম চলে আসছে। বর্তমানে ব্যাপক বিস্তৃত হয়েছে এর ক্ষেত্র। ১৯৯১-৯২ সাল সারাদেশে ক্যাপিটাল গ্রান্টপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৫০টি এবং নিবাসি ছিল ৮ হাজার ৪৭৮জন। আর জন প্রতি অর্থ বরাদ্দ ছিল মাত্র ৩৬০টাকা। ধাপে ধাপে এটা বেড়ে বর্তমানে একজন এতিম শিশুর ভরণপোষণের জন্য সরকারের মাসিক বরাদ্দ নির্ধারণ হযেছে ২ হাজার টাকা। এই খরচের মধ্যে খাদ্যবাবদ ১ হাজার ৬০০ টাকা, পোষাক বাবদ ২০০ ও অন্যান্য খরচ ২০০ টাকা।