এফএনএস: সারাদেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামী ২০ মে। মোট চার ধাপে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। প্রথম ধাপে ২০ মে হতে ৯ জুন ১৪০টি উপজেলায় তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ সময়ে নির্বাচন কমিশনের তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করবেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম-২০২২ উপলক্ষে ‘প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ’ শীর্ষক প্রশিক্ষণের উদ্বোধনকালে এসব তথ্য জানানো হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রধান অতিথি হিসেবে এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. আবদুল বাতেনসহ কমিশনের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচন কমিশন জানায়, এবারের ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে দুই বছরের অগ্রিম তথ্যসহ মোট তিন বছরের তথ্য নেওয়া হবে। যাদের জন্ম ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে অর্থাৎ ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত যেসব ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ বা বেশি তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ কার্যক্রমে ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে যাদের জন্ম তাদের ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি, ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে যাদের জন্ম তাদের ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি এবং ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে যাদের জন্ম তাদের ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি নিবন্ধিত ভোটার হিসেবে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। হালনাগাদে সম্ভাব্য ভোটার বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এছাড়া এর আগে বিভিন্ন কারণে যারা ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি তদেরকেও হালনাগাদে ভোটার করা হবে। ভোটার তালিকা হালনাদ কার্যক্রমে মৃত ভোটারের তথ্যও সংগ্রহ করা হবে। এ সময় ভোটার স্থানান্তরের আবেদনও করা যাবে। ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রয়োজন হবে ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ এবং পিতা/মাতার এনআইডির ফটোকপি-ইউটিলিটি বিলের কপি। ইসি জানায়, এবারের হালনাগাদ কার্যক্রমে প্রায় ৫৬ হাজার তথ্যসংগ্রহকারী এবং ১১ হাজার ৩০০ সুপারভাইজার নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের দিনব্যাপী হাতে কলমে নিবিড়ি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা তথ্যসংগ্রহকারী ও সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। হালনাগাদ কার্যক্রমর প্রত্যেক ধাপে তিন সপ্তাহ সময় দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা পাঠদানের পাশাপাশি যেন ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন সেজন্য সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও তথ্য সংগ্রহ করা হবে। একজন তথ্যসংগ্রহকারী গড়ে ১৮০ জন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করবেন। তথ্য সংগ্রহের পরপরই ধাপে ধাপে নিবন্ধন কেন্দ্রে ভোটারদের নিবন্ধন করা হবে। পূর্বের ন্যায় উপজেলা/থানা পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ এবং সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকায় ওয়ার্ড পর্যায়ে নিবন্ধনকেন্দ্র স্থাপন করে ভোটারদের ছবি, ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ গ্রহণ করে ভোটার নিবন্ধন করা হবে। এ সময় ভোটারদের মূল তথ্যের প্রিন্ট কপি দেওয়া হবে। কমিশন জানায়, রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার তালিকাভুক্ত হতে না পারে সেজন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩২টি বিশেষ এলাকার জন্য বিশেষ কমিটির মাধ্যমে নিবন্ধন যাচাই-বাছাই করা হবে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাগাদের বায়োমেট্রিক সম্বলিত ডাটাবেজও ব্যবহার করা হবে। অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, দেশে বর্তমানে ভোটার সংখ্য ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন, নারী ভোটার ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ৪৫৪ জন। ২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর ২০১০ সালের ৩১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ বা বেশি হয়েছে তাদের নাম অন্তর্ভুক্তিসহ প্রথমবারের মতো ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। ২০১৩ সালে ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ বা বেশি হয়েছে, তাদের নাম অন্তর্ভুক্তিসহ দ্বিতীয়বার, ২০১৫ সালে ৩১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ বা বেশি হয়েছে তাদের অন্তর্ভুক্তিসহ তৃতীয়বার এবং ২০১৮ সালে ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ বা বেশি হয়েছে তাদের নাম অন্তর্ভুক্তিসহ চতুর্থবার ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছিল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিশেষ কার্যক্রম হিসেবে ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে যাদের জন্ম অথবা ভোটার তালিকায় হালনাগানের বিগত কার্যক্রমে বাদ পড়েছেন তাদের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য পঞ্চমবার ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছিল। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত যাদের ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ বা বেশি হয়েছে অথচ ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিগত কার্যক্রমে বাদ পড়েছিল তাদের তথ্য নিয়ে সর্বশেষ ২০১৯ সালে ষষ্ঠ বা মাঠ পর্যায়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।