জি এম শাহনেওয়াজ, ঢাকা থেকে \ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বেকায়দায় ফেলে ফায়দা লুটের আশায় যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করলেও নিবাচন কমিশনের বার্ষিক আয় ও ব্যয়ের হিসাবে এ তথ্যটি সংযোজন করেনি জাতীয়তাবাদী দল -বিএনপি। লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি খতিয়ে দেখে দলটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পাঠানো চিঠি আমলে নিলেও আইনি ফাঁদে আটকে যাচ্ছে ইসি। ফলে দায় মুক্তি পেতে পারে দলটি। কারণ দলের জমার দেয়া হিসাব দু’বার নিরীক্ষার সুযোগ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) বলা নেই। ফলে কমিশন সভায় স্পর্শকাতর এই ইস্যুটি শুধু আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকবে। খবর ইসির দায়িত্বশীল সূত্রের। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, বিএনপির লবিস্ট নিয়োগে অর্থ ব্যয় করা সংক্রান্ত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি আমলে নিয়েছে কমিশন; খতিয়ে দেখা হবে কমিশন সভায়। সভার সিদ্ধান্তের আগে এ বিষয়ে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারকে বিব্রত করতে অনেক দিন ধরেই বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ দেয় বিএনপি। দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এসব লবিস্টের মাধ্যমে বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর পৌঁছে দেয়া হতো। এর ফলে উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখা দিতে থাকে বিশ্বের নীতি-নির্ধারণী মোড়ল রাষ্ট্রগুলোর কাছে। দীর্ঘ প্রচেষ্টায় সফল হয় লবিস্ট নিয়োগকারী সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলটি। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায়নি দেশকে। আর বিশেষ বাহিনী র্যাপিড একশ্যান ব্যাটালিয়ান (র্যাব) এর বিচার বর্হিভূত হত্যা ও গুমের অভিযোগ তুলে র্যাবকে বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেশটি। এসব নানা আলোচিত ঘটনা নিয়ে দেশে রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি হয়। লবিস্ট নিয়োগ কোনো অপরাধ না বলে জানান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মো শহীদ। তবে সরকারের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি এ নিয়ে বাকযুদ্বে নামে। একজন অন্যজনকে ঘায়েল করতে নানা পন্থায় নেমে পড়ে। গত ১৯ জানুয়ারি লবিস্ট নিয়োগের অর্থের উৎস খতিয়ে দেখার জন্য সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি হিসাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বাংলাদেশ ব্যাংক ও নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠায়। গণমাধ্যমকে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা লবিস্ট নিয়োগে বিএনপির করা চুক্তিনামা পাঠিয়েছি। এর আলোকে বিবি ও ইসি দলটির অর্থের উৎস খতিয়ে দেখবে। সরকারের সরবরাহ করা তথ্েযর আলোকে বিষয়টি আমলে নেয় ইসি। এ নিয়ে পর্যালোচনা করে কমিশন সভায় স্পর্শকাতর ইস্যুটি এজেন্ডাভুক্ত করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার কমিশনের ৯৩তম সভায় অন্যান্য ইস্যুর সঙ্গে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি অন্তভুক্ত আছে। তবে সরকারের মনরক্ষার জন্যই লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে কমিশনকে। কারণ আইনি মারপ্যাচে পার পেয়ে যাচ্ছে বিএনপি। কারণ প্রতি আর্থিক বছরে আগের পুঞ্জিকা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিবন্ধিত সব দলকে জমা দিতে হয়। আওয়ামীসহ অন্যান্য দলের মতো বিএনপি তাদের হিসাব জমা দিয়েছে। কিন্ত জমা দেয়া দলটির হিসাবে লবিস্ট নিয়োগের তথ্য উলেখ করেনি। এরপরও ইসি দলটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না। কারণ একটি নিরীক্ষা প্রতিবেদন দুইবার নিরীক্ষা করার সুযোগ নেই। ফলে বিএনপিকে চাপে ফেলার সরকারের এই কৌশলও কাজে আসছে বলে ইসির একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। নাম প্রকাশে ইসির একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে বলেন, লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি অলিখিতভাবে আমরা খতিয়ে দেখেছি। বিএনপির বার্ষিক হিসাবে সেটা উলেখ নেই। এর পর দলটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না কমিশন। কারণ একটি বিষয় দুইবার অডিট করার এখতিয়ার ইসিকে আইনে দেয়নি। ওই নীতি-নির্ধারক বলেন, অভিযোগটি দিয়েছে তাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারের জন্য ইসির এ মনরক্ষা।