এফএনএস স্পোর্টস: টেস্টে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সমীহ জাগানিয়া দল হয়ে উঠতে পারেনি। মাঝেমধ্যে ভালো খেললেও এই সংস্করণে এখনও ধারাবাহিক হতে পারেনি। বেশ কিছু সেশন কিংবা দিন আধিপত্য বিস্তার করলেও পরমুহূর্তে ছন্দ হারায় মুমিনুল হকরা। ফলে হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিপক্ষরা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের আগে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো জানিয়ে দিলেন, উইকেট জোয়ার আটকানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন তারা। হুট করে ছন্দ হারানো ম্যাচের সংখ্যা কম নয় বাংলাদেশের। সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ডারবান টেস্টে যেমন। দারুণ খেলতে থাকা বাংলাদেশ প্রথম চার দিন আধিপত্য বিস্তার করলেও শেষ দিনে গিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। তাতেই বড় ব্যবধানে হারে সফরকারীরা। এর আগে ঘরের মাঠে পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও ভালো অবস্থানে থেকে জিততে পারেনি। এই চট্টগ্রামেই ক্যারিবীয়রা শেষ ইনিংসে ৩৯৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমেছিল। বাংলাদেশের বোলারদের নির্বিষ বোলিংয়ের সুযোগ নিয়ে কঠিন এই ম্যাচ জিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর গত বছর নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে লিড পেয়েও সেটি কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আরও একটি টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে পুরনো দুর্ভাবনা নতুন করে ভাবাচ্ছে। ডমিঙ্গো যদিও আশার কথাই শোনালেন, ‘এটা নিয়ে আমরা রোজ কথা বলছি এবং সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজছি। ড্রেসিং রুমে নিজেদের শান্ত রাখার কাজ করছি। ব্যাটসম্যানদের ফুরফুরে রাখার চেষ্টা করছি। খারাপ কিছু হলেও সেই আলোচনা বন্ধ রেখে ভালো কিছু চিন্তা করাচ্ছি। এটা ক্রিকেটের অংশ।’ ভালো খেলতে থাকা বাংলাদেশ হঠাৎ হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে উইকেট জোয়ার আটকানোর চেষ্টায় কাজ করছে তারা। প্রধান কোচের ভাষায়, ‘যখন আমাদের খারাপ সেশন যায়, তখন আমরা সত্যিই খুব বাজে খেলি। আমাদের খারাপ সেশন কাটানো মানেই ৬-৭ উইকেট হারানো। কিন্তু ১-২ উইকেট হারালেই আমরা ৪-৫ উইকেট হারাতে পারি না। এটা আমাদের অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের অবশ্যই উইকেট জোয়ার আটকাতে হবে।’ ডমিঙ্গো মনে করেন, প্রতিটি সেশনে ভালো না করলে জেতা সম্ভব নয়। বেশ কিছু টেস্টের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা এগিয়ে ছিলাম, এরপর আমরা দ্রুত উইকেট হারাই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট আমাদের জেতা উচিত ছিল। তারা ৩৯৫ রান তাড়া করেছিল। আমরা নিউজিল্যান্ডে টেস্ট জিতেছিলাম। ডারবান টেস্টের প্রথম চার দিন আমরা সত্যিই ভালো খেলেছি। আমি বিশ্বাস করি, যেকোনও দলকে হারানোর ক্ষমতা আমাদের আছে, যদি আমরা পুরো পাঁচ দিন সত্যিই ভালো খেলি। তবে সেটি চার দিনের জন্য নয়।’ দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডে সিরিজ জিতলেও টেস্ট সিরিজে হতাশ করেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ সিরিজের পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন ডমিঙ্গো, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের ভালো সময় কেটেছে। হয়তো শেষ দুই ইনিংসে আমরা ভালো করতে পারিনি, সত্যিকার অর্থে ওখানে ব্যাটিং করা বেশ কঠিন ছিল। দিনের শেষ কয়েক ওভারে যখন আলো কমে আসছিল, তখন ব্যাটিং করা সহজ ছিল না। ছেলেরা কঠিন কন্ডিশনে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা দুর্দান্ত স্পিন আক্রমণ সাজিয়েছিল। আমার মনে হয় না দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের কোনও প্রভাব এই সিরিজে পড়বে।’ দেশের বাইরে পেস নির্ভর উইকেটে বোলিংয়ের সুযোগ পেলেও দেশে সেই সুযোগ নেই পেসারদের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে ফ্লাট উইকেট অপেক্ষা করছে। এই অবস্থায় পেসারদের কাজ করা বেশ কঠিন। ডমিঙ্গো বলেছেন, ‘আমরা জানি এই উইকেটে প্রথম দুই-এক ঘণ্টায় ফাস্ট বোলারদের জন্য কিছু থাকবে, তারপর পেসারদের জন্য খুব কঠিন হয়ে যাবে। আমি গতকাল শুক্রবার সকালে বোলারদের বলেছিলাম, আমরা দক্ষিণ আফ্রিকায় দুটি টেস্টে ৩৬ উইকেটে নিয়েছি। আমার মনে হয় না বাংলাদেশের পেসাররা এক সিরিজে এর আগে এত উইকেট নিয়েছে। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, আমাদের বোলাররা ২০ উইকেট নিতে পারবে।’