এফএনএস: গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুত ১৭৬ শ্রমিককে ৪০০ কোটি টাকা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সোমবার কোম্পানি কোর্টে এ তথ্য জানান তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. মোস্তাফিজুর রহমান খান। হাইকোর্টের কোম্পানি কোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়। এখন গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে করা আবেদন শ্রমিকদের পক্ষ থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রমিক পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী। এর আগে ৭ ফেব্র“য়ারি গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে অবসায়নের আবেদন করেছিলেন ইউসুফ আলী। এই আইনজীবী বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কাছে শ্রমিকদের পাওনা ২৫০ কোটি টাকার বেশি। এই পাওনা টাকার দাবিতে কোম্পানিটির অবসায়ন চাওয়া হয়েছিলো। এখন সেই আবেদন প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া চলছে। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ টেলিকমে ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ চলে আসছে। জানা গেছে, এক নোটিশেই ৯৯ কর্মীকে ছাঁটাই করে গ্রামীণ টেলিকম। পাওনা চেয়ে মামলা করায় এমনটা করা হয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতরা। বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করায় ২০১৬ সালে প্রথম মামলা করেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ১৪ কর্মী। পরে পাওনা চেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ৯৩টি মামলা করেন গ্রামীণ টেলিকমের বর্তমান কর্মীরা। ঢাকার শ্রম আদালতে সব মিলে ১০৭টি মামলা হয়। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ১৪ কর্মী আরও ১৪টি মামলা করেন পাওনা টাকার জন্য। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গ্রামীণফোনে ৩৪ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ার আছে গ্রামীণ টেলিকমের। প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব পলীফোন ছাড়াও নোকিয়া মোবাইলের সার্ভিস দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা কর্মীদের মাঝে বণ্টন করে দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। ২০০৬-২০১৯ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকমের মুনাফা হয়েছে ছয় হাজার ১৫ কোটি টাকা। কিন্তু এ নিট মুনাফার ৫ শতাংশ কর্মীদের, প্রতিষ্ঠানের কল্যাণ তহবিল ও সরকারের শ্রমিক কল্যাণ তহবিল ও ৮০:১০:১০ অনুপাতে পরিশোধ করার বিধান থাকলেও তা পরিশোধ করা হয়নি। সেই সঙ্গে শ্রমিক কল্যাণ তহবিল ও শ্রম অধিদপ্তরের কলকারখানা এবং প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে সরকারের পাওনা টাকা চেয়ে বারবার চিঠি দেওয়া হলেও কোনো কর্ণপাত করেনি গ্রামীণ টেলিকম। উল্টো শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করে নোটিশের মাধ্যমে ৯৯ জন কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হয়। এর মধ্যে শ্রম অধিদপ্তরের নিবন্ধন করা গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্য ও নেতারাও রয়েছেন। ইউনিয়নের নেতারা জানান, কোনো নোটিশ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা না করেই এক নোটিশের মাধ্যমে ৯৯ কর্মীকে ছাঁটাই করেন ড. ইউনূস। গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসানের সই করা নোটিশের মাধ্যমে এ ছাঁটাই হয়। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান বলেন, বেআইনিভাবে ২০১৬ সালে এক চিঠিতে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়। এর মধ্যে ইউনিয়নের সাতজন কার্যকরী সদস্য রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের সব কর্মী ও ইউনিয়নের কার্যকরী সদস্য ছাঁটাই সম্পূর্ণ বেআইনি। এদিকে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান। বিবাদীদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন আদালত। মামলার অন্য আসামিরা হলেন গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও শাহজাহান। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের কিছু লঙ্ঘন দেখতে পান। এর মধ্যে ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। এছাড়া শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে এ মামলা হয়।