দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ কয়েক বছর পূর্বেও আম ছিল অন্যান্য মৌসুমী ফলের ন্যায় ভোগ্য পণ্য, আথিথেয়তা, সহ বাসা বাড়ীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, চাহিদা তুলনায় অতিরিক্ত আম হাট বাজারে বিক্রি করা পর্যন্ত পাকা আমের জগৎ ছিল, পাইকার আম ব্যবসায়ীরা সাতক্ষীরার গ্রামে গ্রামের পরিভ্রমন পরবর্তি আম নাম মাত্র মূল্যে ক্রয় করে তা জেলা শহর এবং রাজধানী ঢাকার বাজারে চালান দিতেন। পরবর্তিতে রাজধানী ঢাকায় সাতক্ষীরার আমের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে এই অঞ্চলে বানিজ্যিক ভাবে আম চাষ শুরু হয়। সময়ের ব্যবধানে বাস্তবতার নিরিখে সাতক্ষীরার আম কেবল মাত্র ভোগ্য পণ্য, আথিথেয়তা বরন বা রসনা তৃপ্ত করা নয়, এই ফল বর্তমানে আম শিল্পের মর্যাদা লাভ করেছে। অর্থকরী ফসল, তথা অর্থনৈতিক মূল্যে পারদ স্পর্শ করে বিশ্ব বাজারকে স্পর্শ করেছে। সাতক্ষীরার আম আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশকে কেবল আলোকিত, সম্মান বা পরিচিতি ঘটাচ্ছে তা নয় বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের মহাক্ষেত্র বিস্তৃত করেছে। গত ৫/৭ বছর যাবৎ বিশ্ব বাজারে আম রপ্তানীর মধ্য দিয়ে আমের বানিজ্যিক চাষ এবং আম কেন্দ্রীক অর্থনীতির সুবাতাস প্রবাহিত হচ্ছে সাতক্ষীরায়। বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিতে ও ইহা যথাযথ ভূমিকা পালন করছে। অপরাপর কৃষি পন্য উৎপাদন দীর্ঘদিনের কিন্তু আম চাষের সৃষ্টি সা¤প্রতিক বছর গুলোতে। সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় বানিজ্যিক ভাবে শত শত আম বাগান সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে পতিত জায়গা, বাড়ীর আঙ্গীনা, পুকুর পাড় এমনকি বাড়ীর ছাদে ও আম চাষ হচ্ছে। খোজ নিয়ে জানাগেছে বাগান তৈরীতে মালিকরা কেবল লাভবান হচ্ছে না, এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা বিশেষ ভাবে আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছে, আম চাষী আঃ জব্বার বললেন মৌসুমের পুর্বেও আম বাগান ক্রয় বিক্রয় হয়। গাছে মুকুল (স্থানীয় ভাষায় যাকে বোল বলে) আসার পূর্বে আম গাছ ব্যবসায়ীরা ক্রয় পরবর্তি তার পরিচর্যা শুরু করে। এক একটি বাগানে শুরু হতে আম ভাঙ্গা পর্যন্ত ক্ষেত্র বিশেষ ৫/৭ জন করে শ্রমিক কাজ করে। আমের গুটি আসলে আরেক ধরনের পরিচর্যা শুরু হয়, যার ধারাবাহিকতায় বাগানে বাগানে বাসা (ট্যাংঘর) তৈরী করে প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়। সাতক্ষীরার হীমসাগর এবং ন্যাংড়া বিখ্যাত এবং এই দুই আমের চাহিদাও সর্বাধিক। অবশ্য গোবিন্দ ভোগ এর স্বাদও কম নয়। বৃহৎ আকারের গোবিন্দ ভোগ আম মৌসুমের প্রথমেই পাক ধরে বিধায় বাজারে প্রথম গোবিন্দ ভোগের সন্ধান পান ক্রেতারা। পাশাপাশি বোম্বাই, লতা, আমরুপালী, চন্দ্রমলিকার উৎপাদন এবং চাহিদাও কম নয়, বর্তমান সময়ে সাতক্ষীরার অর্থনীতি আম কেন্দ্রীক বাজারে বাজারে, গ্রামের মেঠো পথে, আম বাগানে ক্রেতা বিক্রেতাদের সরব উপস্থিতি। রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরাও বর্তমান সময়ে সাতক্ষীরার খুচরা ব্যবসায়ীদের (যোগানদাতা) এবং পাইকারী ব্যবসায়ীদের বাড়ীতে অবস্থান করছে, সাতক্ষীরা শহরের বড় বাজার, ধুলিহর, আগরদাড়ি, আবাদের হাট, মাহমুদপুর, ভাড়–খালী, কলারোয়া বাজার, সোনাবাড়িয়া, ইলিশপুর, ব্রজবকস সহ অপরাপর বাজার দেবহাটার কুলিয়া, পারুলিয়া, দেবহাটা সদর, টাউন শ্রীপুর, কালিগঞ্জের ফুলতলা, নাজিমগঞ্জ, দুধলে, বেলেডাঙ্গা, মৌতলা, এমনি ভাবে শ্যামনগর, তালা, পাটকেলঘাটা ও আশাশুনীর মোড়ে মোড়ে প্রতিদিন ট্রাকে আম লোড হচ্ছে রাজধানী ঢাকা, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম সহ অপরাপর শহরে যাত্রার উদ্দেশ্যে, আম ব্যবসায়ী সাইফুল জানান এ এলাকায় উৎপাদিত আমের বড় অংশ রাজধানী ঢাকায় ও বিশ্ব বাজারে যাচ্ছে। দুই বছর পূর্বেও আম মালিকরা বাজারের আড়ৎদারের ঘরে আম পৌছে দিত, সেক্ষেত্রে মালিক পক্ষ যথাযথ মূল্য না পেলেও বর্তমানে আম ব্যবসা বাগান কেন্দ্রীক বিধায় উৎপাদন কারীরা মধ্যস্বত্বভোগীদের যাতাকলে পৃষ্ট হচ্ছে না। একটি মাঝারী সাইজের হীম সাগর বা ন্যাংড়া গাছ এক মৌসুমের জন্য পনের হাজার হতে বিশ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গাছ মালিক আগাম টাকা নিচ্ছে এক্ষেত্রে আম গাছ ক্রেতাদের ঝুকিও থাকছে এ বিষয়ে রজব আলী নামক আম ব্যবসায়ী জানান প্রতি বছর গাছ একই ধরনের ফল দিতে পারে না, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দূর্যোগ দুর্বিপাক আছে। তিনি আরও জানান গত দুই বছর যাবৎ কাঁচা আম অর্থাৎ আমের আটি হওয়ার সময়ে ভেঙ্গে তা বিক্রি করা হচ্ছে এবং রাজধানী সহ অন্যান্য বাজারে কাঁচা আমেরও চাহিদা সর্বাধিক কারন টক ডাউল সহ আমের আচার, শরবত, সহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রীতে ব্যবহার হচ্ছে। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি স¤প্রসারন দপ্তরের উপপরিচালক নুরুল ইসলাম জানান কৃষি অফিস আমচাষীদের বিশেষ সুবিধা প্রদান সহ উৎপাদনে পরিচর্যায় দেখভাল করছে। দিনে দিনে সাতক্ষীরার চাষীরা আম চাষে ঝুকছে যা অর্থনীতির জন্য ফলদায়ক। সাতক্ষীরার আম বর্তমান সময়ে এই জেলাকে শুধুমাত্র অর্থনীতিতে অগ্রগামী করছে তা নয়, বিশ্ব বাজারে দেশের পাশাপাশি সাতক্ষীরাকে পরিচিত করছে। আম চাষে সরকারি প্রনদোনা, ভুর্তূকির ব্যবস্থা সহ চাষীদের ঋণদান করলে এই শিল্প অর্থনীতির অপারক্ষেত্র সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন আম চাষীরা।