এফএনএস : ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হবে আর কয়েকদিন পরে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বাজেটের নানা দিক নিয়ে আলোচনা। অর্থ মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বরাবরের মতো নতুন অর্থবছরের বাজেটেও বাড়ানো হচ্ছে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা। এবারও থাকছে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ, যদিও চলতি অর্থবছরে এটাতে খুব বেশি সাড়া মেলেনি। আগামী অর্থবছরের বাজেটে রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। পাশাপাশি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে যোগাযোগ ব্যবস্থায়। চলতি (২০২১-২২) অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। যদিও রাজস্ব বোর্ডের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত আদায় হয়েছে দুই লাখ চার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব, যা লক্ষ্যমাত্রার ৬২ শতাংশ। ফলে বাকি তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ অর্জন নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এ বাস্তবতায়ও আগামী অর্থবছরে তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে চায় এনবিআর, যা চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি। জানা যায়, নতুন অর্থবছরে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) থেকে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯শ কোটি টাকা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। কাস্টমস বা আমদানি শুল্ক বাবদ আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। নতুন এসব লক্ষ্যমাত্রা, চলমান লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ভ্যাটে ৬ দশমিক ২২ শতাংশ, আয়করে ১৬ দশমিক ৭৬ ও কাস্টমসে ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। তবে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনযোগ্য জানিয়ে এনবিআর সদস্য (মূসক) আবদুল মান্নান শিকদার বলেন, বিষয়টি এখনো চ‚ড়ান্ত নয়। কোন খাত থেকে কত টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যায় সে বিষয়ে কাজ করছি। তবে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনযোগ্য। যদিও রাজস্ব আদায়ের এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। ঢাকায় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলেন, রাজস্ব বোর্ড নিজেও জানে তাদের প্রস্তাবটা একটু উচ্চ লক্ষ্যমাত্রার। কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না। তারপরও বড় টার্গেট (লক্ষ্যমাত্রা) দিচ্ছে পরিকল্পনার জন্য। কিন্তু রাজস্ব আদায়ে যদি নতুন মেকানিজম (কৌশল) না হয় তাহলে এত বড় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, এ বছরও যেমন বলা হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে, শেষে হয়তো ৭০-৭২ শতাংশ আদায় হবে। আসছে বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা আরও বড়, নতুন কোনো কৌশল দেখাতে না পারলে চলতি অর্থবছরের মতোই অবস্থা হবে। কাজেই জিডিপির যে প্রবৃদ্ধি এখন হচ্ছে, মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধি দেখছি। এটাকে (প্রবৃদ্ধি) কর আদায়ের ক্ষেত্রে আনার ব্যাপারে রাজস্ব বোর্ডের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দরকার। তা না হলে এটা কেবল একটা লক্ষ্যমাত্রাই থেকে যাবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর সুযোগ থাকলেও আবাসন খাত ও পুঁজিবাজারে বিনা প্রশ্নে কালো টাকা (অপ্রদর্শিত অর্থ) বিনিয়োগের সুযোগ এবার আর থাকছে না। সাধারণ ক্ষমার (ট্যাক্স অ্যামনেস্টি) সুবিধা বাতিল করা হচ্ছে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে এ দুই খাতে বিনিয়োগ করলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা সরকারি অন্য কোনো সংস্থা অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবে। চলতি অর্থবছরে কাক্সিক্ষত সাড়া না পাওয়ায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৬৯৪ জন কালোটাকা সাদা করেছেন। এর মধ্যে ৫৫৮ জন ফ্ল্যাট ও জমির মালিক কালোটাকায় কেনা সম্পদ দেখিয়েছেন। ১২৩ জন করদাতা তাদের নগদ টাকা কিংবা সঞ্চয়পত্র ও এফডিআরের টাকা সাদা করেছেন। এ ছাড়া কালোটাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন মাত্র ১৩ জন। এদিকে বিদেশে যারা অর্থপাচার করেছেন তাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ আসছে আগামী বাজেটে। ট্যাক্স অ্যামনেস্টি সুবিধার মাধ্যমে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা যাবে দেশে। সে সুযোগের ঘোষণা থাকবে বাজেটে। জানা গেছে, অনেকে বিদেশে টাকা পাচার করেছে ঠিকই; কিন্তু আইনের ভয়ে দেশে আনতে পারছেন না। এমন সব ব্যক্তির জন্য এ সুযোগ দেওয়া হবে। আগামী বাজেটে এই অ্যামনেস্টি তিনভাবে দেওয়া হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। প্রথমত, বিদেশে স্থাবর সম্পত্তি থাকলে সেই সম্পত্তি দেশের আয়কর রিটার্নে দেখাতে চাইলে তাকে অবশ্যই ১৫ শতাংশ আয়কর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জমি, ফ্ল্যাট, আবাসিক ভবন, শিল্প-কলকারখানা বা জমিতে লাগানো গাছপালা। আর টাকা, স্বর্ণ, ঘড়ি বা অন্য কোনো মূল্যবান ধাতব পদার্থসহ অন্যান্য অস্থাবর সম্পত্তির ওপর ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। এ ছাড়া কেউ যদি বিদেশ থেকে সরাসরি দেশে টাকা আনেন তা হলে সেই টাকার ওপর ৭ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে দেখাতে পারবেন। তবে ব্যাংক হিসাবে টাকা যোগ হওয়ার আগেই কর পরিশোধ করতে হবে। সবকিছুতেই টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন করা হবে না বলে জানিয়েছেন রাজস্ব বোর্ডের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা। কেউ যেন ভয় না পান সে ব্যাপারে এর জন্য আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হবে। এমনকি বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হবে। যেন বিনাদ্বিধায় বিদেশে পাচার করা টাকা দেশে ফেরত আনতে পারে। আগামী ৯ জুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল। দেশের ৫১তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২২তম এই বাজেটে গুরুত্ব পাচ্ছে দেশের অবকাঠামো, সামাজিক সুরক্ষা, কৃষি ও কর্মসংস্থান।