বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০৫:৪৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
‘মে দিবস’ শ্রমিকদের মর্যাদা ব্যতীত দেশ-জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয় মার্কিন রনতরিতে হুতিদের ড্রোন হামলা আগুন ঝরা তাপদাহ নানান ধরনের রোগ ছড়াচ্ছে মসলা যুক্ত ভারী খাবার গ্রহণ না করার পরামর্শ চিকিৎসকদের ডাঃ শরিফুল ইসলাম সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেলেন জিরো পয়েন্ট রুপালী ব্যাংকর নতুন শাখা উদ্বোধন ৮ দলীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ফতেপুর ইয়ংস্টার ক্লাব চ্যাম্পিয়ন সাতক্ষীরায় বিআরটিএ মোবাইল কোর্ট অব্যাহত নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেমিনার অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে তাপ প্রবাহজনিত পীড়ন প্রতিরোধে প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় করণীয় বিষয়ে জনসচেতনা সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের সেতু বন্ধন

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০২৪

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ নৌপথে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার যোগাযোগ প্রসারের ক্ষেত্রে দুটি দেশের অমিমাংসিত দূরত্ব কমে তৈরি হচ্ছে নতুন সেতুবন্ধন। দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অন অ্যারাইভাল ভিসা দ্বার খুলছে। চলতি বছরের মাঝামাঝি এটি চালু হতে পারে। ফলে দেশের মানুষের পুঞ্জিভূত দুংখের অবসান ঘটবে। দু’দেশের নাগরিকরা এর সুফল পাবেন এমনটাই প্রত্যাশা নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের। এর আগে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের নৌসচিব পর্যায়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ ইস্যুতে ঐক্যমতে পৌছার পর এ জট খুলছে। এছাড়া দু’দেশের মধ্যে পর্যটনখাতের সুবিধা আদায় এবং পোর্ট অব কল অন্তর্ভুক্তি ইস্যুতে চলছে দেন-দরবার। এ দুটি বিষয়ে যৌক্তিক দাবিনামায় একমত হতে ইতিমধ্যে ৮০ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা গেছে। গঠিত হয়েছে বেশি ভাগ কমিটি। শিগগিরই দু’দেশের নিজেদের স্বার্থ সমুন্নত রেখে চুক্তি বা সমঝোতায় পৌছাতে শুরু করবেন গঠিত কমিটি তাদেও ধারাবাহিক সভা। নৌমন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নৌপথে যোগাযোগ, বাণিজ্য ও পর্যটক বৃদ্ধির জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা এবং প্রটোকল রুট বৃদ্ধিসহ একাধিক বিষয়ে সম্মত হয় সচিব পর্যায়ের সভায়। এ ছাড়া সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন আরও সহজ করার জন্য দুই দেশের বিভিন্ন বন্দর ‘পোর্ট অব কল’ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব ছিল। তবে নৌবাণিজ্য সহজীকরণ করার নিমিত্তি অন অ্যারাইভাল ভিসা বা ভিসা অন অ্যারাইভাল ইস্যুটি ছিলো গুরুত্বপূর্ণ। এই ভিসায় সুবিধা পান যাত্রীরা। কারণ বিদেশে পৌঁছানোর পর ভিসা হাতে পাবেন। এক্ষেত্রে যাত্রার আগে ভিসা করতে হয় না। এটি ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াকে সহজ করে দেয়, যা ভ্রমণকে আরো দ্রুত এবং সুবিধাজনক করে তোলে। সব দেশে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া হয় না। এখ পর্যন্ত নেপাল, ভূটান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপসহ বেশ কয়েকটি দেশে এ সুযোগ পেয়ে থাকেন দেশের নাগরিকরা। পাশর্^বর্তী দেশে পর্যটন কিংবা চিকিৎসার প্রয়োজনে বেশি ভ্রমণ করলেও অন অ্যারাইভাল ভিসা চালু করার বিষয়ে অনাগ্রহ ছিলো বরাবরিই ভারতের। সর্বশেষ নৌপথে বাণিজ্যকরণ সহজ করার স্বার্থে অন-অ্যারাইভাল ভিসা চালুর বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায় বন্ধুপ্রতীম দেশটির পক্ষ থেকে। এ নিয়ে নৌমন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের লাভ-ক্ষতি যাচাই সম্পন্ন করে প্রস্তাবটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সংশোধিত ভ্রমণ ব্যবস্থা (আরটিএ) সংশোধনের কাজে শেষ পর্যায়ে। এখন ভারতের সঙ্গে কনস্যুলার মিটিং করা এবং আরটিএসংশোধন করার মাধ্যমে অন অ্যারাইভাল ভিসা প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে। নৌমন্ত্রণালয় আশা করছে, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে অন অ্যারাইভাল ভিসা প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত রুপ পাওয়া যাবে। নৌপথে যাত্রী চলাচল এ সুবিধার জন্য বাড়বে। কারণ হিসেবে নৌ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নৌপথে ভ্রমণকারী বাংলাদেশী পর্যটক, যাত্রী ও ক্রুদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়াকরণ সহজ হবে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, দুদেশের মধ্যে উপকূলীয় ও প্রটোকল রুটে যাত্রী ও ক্রুজ পরিষেবা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের আওতায় এখন পর্যন্ত নয়টি সমুদ্রযাত্রা সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি ভারতীয় জাহাজ এবং দুটি বাংলাদেশী জাহাজ। বাংলাদেশ ও ভারতের পর্যটন খাতে সাম্প্রতিক উন্নয়নের কারণে, অনেক বাংলাদেশী পর্যটক ভারত ভ্রমণ এবং নদী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিতে আগ্রহী। বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটররাও ঢাকা থেকে কলকাতা নিয়মিত ক্রুজ পরিচালনা করতে আগ্রহী। দুদেশের মধ্যে নৌপথে যাত্রী এবং ক্রুজ পর্যটক ভবিষ্যতে বৃদ্ধি পাবে। তাই নৌপথে ভ্রমণকারীর জন্য ভিসা পদ্ধতি সহজ করে অন অ্যারাইভাল ভিসা চালুতে সম্মত হয় উভয় দেশ। দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির পর্যায়ে রয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এস এম মোস্তফা কামাল গতকাল বলেন, নৌপথে বাংলাদেশ হয়ে ভারত এবং ভারত থেকে এখানে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে অন অ্যারাইভাল ভিসা খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে বলে আমি বিশ^াস করি। এটি মূল স্টেকহোল্ডার দু’দেশের স্বরাস্ট মন্ত্রণালয়। তারা সেটি খতিয়ে দেখেছে। উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আমরা আশা করছি, সব প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের মধ্যে নৌপথে চলাচল করা যাত্রীরা এর সুফল পেতে পারেন। এদিকে, নৌসচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের ২১টি ও ভারতের ১১টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে একাধিক বিষয়ে সম্মত হন উভয় দেশের প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি দুই দেশের নৌ-প্রটোকল রুট সচল করা এবং পর্যবেক্ষণের জন্য একটি যৌথ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সে সময়ে নৌ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল বলেছিলেন, দুই দেশের নৌবাণিজ্য ও যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য একাধিক প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে নৌপথে যাতায়াতের জন্য নাবিক, ক্রু ও পর্যটকদের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসার বিষয়ে সম্মত হয়েছে উভয় দেশ। এ বিষয়ে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যথাযথভাবে প্রস্তাব পাঠানো হবে। এ ছাড়া দুই দেশের নৌ-প্রটোকল রুট সচল রাখা ও পর্যবেক্ষণের জন্য একটি যৌথ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি নৌপথে পর্যটক বৃদ্ধির জন্য নতুন রুট প্রস্তাব করা হয়েছে। তাই এই বৈঠকে দুই নৌপথের যোগাযোগ বৃদ্ধির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয় বলে জানান তিনি। এরই ফলশ্রুতিতে অন অ্যারাইভাল ভিসা প্রক্রিয়ার বাইরে পর্যটন ইস্যুতে দেশের ভিন্ন প্রস্তাব করা হয়। বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত বাণিজ্য চুক্তির অনুসরণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (পিআইডবি¬উটিটি) ১৯৭২ সালের ১ নভেম্বর স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান পিআইডবি¬উটিটি ১৯৭২ সালে স্বাক্ষরের পর থেকে নবায়নের ভিত্তিতে অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পাঁচটি (আপ-ডাউন হিসেবে দশটি) নৌরুট বিদ্যমান রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com