দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ চিংড়ী মৌসুম শুরুতেই সাতক্ষীরার চিংড়ী ঘের গুলোতে মড়ক শুরু হয়েছে। সাতক্ষীরা দেশের সর্বাধিক চিংড়ী উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের ক্ষেত্র কাঙ্খিত ভূমিকা রেখে চলেছে। গত দুই মাস বা তার বেশী সময় পূর্বে ঘের ব্যবসায়ীরা ঘেরে চিংড়ী রেনু অবমুক্ত করে, দুই মাসের মধ্যে চিংড়ী বাজারজাত করনের সময় আসায় চাষীরা চিংড়ী ধরার প্রস্তুতি নিতে থাকে এরই মধ্যে অভিশপ্ত কথিত ভাইরাস ঘের ঘেরে হানা দিয়ে চিংড়ীর মড়ক ত্বরান্বীত করে। বর্তমান সময় গুলোতে চাষীদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিনত হতে চলেছে। গত কয়েক বছর যাবৎ ভাইরাসের কবলে সাতক্ষীরার চিংড়ী শিল্প, এ বছর ও তার ব্যতিক্রম ঘটছে না, জমির হারীর মুল্য বৃদ্ধি, রেনুপোনার আকাশ ছোয়া মুল্য, সহ অপরাপর পরিচর্যা সামগ্রীর মুল্য ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকলেও প্রয়োজনের তাগিতে চাষীরা ঋন মাথায় নিয়ে চিংড়ী চাষ শুরু করে। সাতক্ষীরার কুলিয়া পুটিমারী খাল পুনঃখনন মৌসুমের মধ্যভাগে উলেখযোগ্য পরিমান ঘেরে লবনাক্ত পানি উত্তোলন করায় এমনিতেই মৌসুম হতে পিছিয়ে পড়ে চাষীরা তার উপর ভাইরাসের আক্রমন চোখে অন্ধকার দেখছেন ঘের ব্যবসায়ীরা। সাতক্ষীরার অর্থনীতি দৃশ্যতঃ চিংড়ী নির্ভর বিধায় চিংড়ীর উৎপাদন, বাজারজাত করনের সাথে এই অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা ঘূর্ণায়মান। চাষীরা জানান চিংড়ী বাজার জাত করনের সময় অর্থাৎ আটন দৌড় বা জোয়ার দিয়ে চিংড়ী ধরার মুহুর্তে চিংড়ীতে হলুদাভাব এবং গোটা গোটা দাগ নির্ভর হয়ে ঘেরের ভেড়ীর ধারে এসে মৃত পড়ে থাকছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে অনেক ঘের ব্যবসায়ী ঘেরের পরিচর্যা খরচ যোগান দিতে পারছে না। সাতক্ষীরা এলাকার ঘেরগুলোতে রেনু পোনার সিংহভাগ যোগান দিয়ে থাকে কক্সবাজার এলাকার হ্যাচারী গুলো। সা¤প্রতিক বছর গুলোতে শ্যামনগর, ডুমুরীয়া সহ স্থানীয় পর্য়ায়ে রেনু পোনার হ্যাচারী গড়ে উঠেছে। ঘের ব্যবসায়ীদের ধারনা রেনু চিংড়ী ভাইরাস বহন করে হয়ত বা সে কারনে বাজার জাত করনের সময় ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। ভাইরাস মুক্ত পোনার নিশ্চয়তা অনেকে ভাইরাস রোধের অবলম্বন হিসেবে দেখছেন যে কারনে ঘেরগুলোতে সরবরাহ করা চিংড়ী রেনুর ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা করা জরুরী। জেলার মৎস্য দপ্তরকে ভাইরাস প্রতিরোধী কর্মযজ্ঞের সাথে একাত্বতা ঘোষনা করতে হবে এবং চিংড়ী ঘেরের পানি মাটি পরীক্ষার তাগিদ দিতে হবে। চিংড়ী চাষী সহ ঘের ব্যবসায়ীদেরকে মৌলিক প্রশিক্ষন দিতে হবে, বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশ অন্যতম চিংড়ী রপ্তানী কারক দেশ একই ভাবে দেশের মধ্যে সাতক্ষীরা বৃহৎ চিংড়ী উৎপাদনকারী দেশ। বিধায় সাতক্ষীরার চিংড়ী শিল্পে ঢস নামলে কেবলমাত্র সাতক্ষীরার অর্থনীতিকে বাঁধাগ্রস্থ করবে তা নয় দেশের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের ক্ষেত্রে চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। কেন এবং কি কারনে চিংড়ীর মড়ক এ বিষয়ে চাষীরা অন্ধকারে এবং অজ্ঞ বিধায় সংশ্লিস্ট দায়িত্বশীল মৎস্য দপ্তরকেই ভাইরাস প্রতিরোধী এবং চিংড়ী মড়ক দুরীকরনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। ভাইরাসে চিংড়ীর মড়কে সাতক্ষীরার ঘরে ঘরে চাঁপা কান্না বিরাজ করছে দৃশ্যতঃ প্রতিটি পরিবার কোন না কোন ভাবে চিংড়ী চাষের সাথে সংশ্লিষ্ট। চাষীরা শুধু মাত্র ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তা নয় চিংড়ী ব্যবসায়ী, জমি মালিক, শ্রমিক শ্রেনি সকলেই দুরবস্থার সাথে দিন যাপন করছে। ভাইরাসের তান্ডব চিংড়ী ঘের গুলোকে এতটুকু বিপর্যস্ত করেছে যে অর্থের অভাবে অনেকে ঘেরে রেনু পোনা ছাড়তে পারছে না। চিংড়ী ঘেরে কর্মরত শ্রমিক, নৈশ প্রহরী, সহ সংশ্লিষ্ট সকলেই হতাশায় ভুগছে, চিংড়ী শিল্পকে রক্ষা করতে হলে অবিলম্বে ভাইরাস মুক্ত ব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটাতে হবে আর এ জন্য মৎস্য দপ্তরকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।