শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
দেবহাটার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুছার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন ইসরাইল হামাসের বিশভাগ সক্ষমতা ও ধ্বংস করতে পারেনি শ্যামনগরে ঘূর্ণিঝড় বিষয়ক গনসচেতনামূলক মহড়া অনুষ্ঠিত শ্যামনগরে অসহায় দুস্থ ও হতদরিদ্র নারী কর্মীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ ক্রেতা সাধারণ জিম্মি ব্যবসায়ীদের হাতে———– কপিলমুনিতে গলাকাটা দরে কেজিতে তরমুজ বিক্রয় বড়দলে উন্নয়ন প্রচেষ্টার উদ্যোগে সুরক্ষা সেবা প্রদান আশাশুনি তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি ও বৃষ্টির প্রার্থনা করে ইসতেসকার নামাজ আদায় আশাশুনিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজের রাস্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন আশাশুনিতে বৃষ্টি জন্য ইস্তেস্কার নামাজ আদায় পাটকেলঘাটায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত

ভারত নির্ভরশীলতা কমিয়ে কুরবানির পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা \ সমৃদ্ধ হচ্ছে ‘পারিবারিক অর্থনীতি’ \ কর্মসংস্থান হচ্ছে গ্রামীণ জনপদে \ সাতক্ষীরায় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ২ জুলাই, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার \ ভারত নির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টায় চমক দেখিয়েছে গ্রামীণ পশু শিল্প। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ এখন গরু পালন করছে। কুরবানীতে পশু বিক্রয়ের মাধ্যমে বছরের বৃহৎ অংশ জুড়ে ‘পরিবারিক অর্থনীতি’ সমৃদ্ধ শালী হচ্ছে। স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জন করেছে গরু ও ছাগল উৎপাদনে। দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি কর্মসংস্থান হচ্ছে গ্রামীণ জনপদের হাজার হাজার নারী পুরুষের। একই সঙ্গে দেশের মাংসের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশি মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও দেশের গোশতের চাহিদার বড় অংশ মিটতো প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আমদানি করে। বর্তমানে সে চিত্র আর নেই। ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধ করে দেয়। এতেই বাজারের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশে গবাদিপশুর লালনপালন ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। দেশে প্রতিবছর ২৫ শতাংশ হারে গবাদিপশুর খামার বাড়তে শুরু করে। প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব মতে বাংলাদেশে এবার প্রায় ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি পশু কুরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোনরকম সংশয়, সংকট বা আশঙ্কার কারণ নেই। এতে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো বেচা-বিক্রি হবে। ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে কয়েক বছর সময় লাগলেও এটি এখন বাংলাদেশের গ্রামের অর্থনীতির অন্যতম ভিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছে ভারত নির্ভরশীলতা বন্ধ করতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আগামী কয়েক বছরে ঘুরে দাঁড়াবে। তবে চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে পারলে গ্রামীণ এই শিল্প আরো সমৃদ্ধ শালী হবে বলছে সংশ্লিষ্টরা। তবে এ বছর পদ্মা সেতু চালুর ফলে কুরবানির পশু ক্রয় বিক্রয় বেশি হবে এবং ন্যায্য দাম পাওয়ার আশা করছে চাষিরা। খামারিরা বলছে “গরু বিক্রি থেকে খামারিরা একটা আয় পায়। সব খরচ বাদ দিয়েও একটি গরুতে অন্তত হাজার দশেক টাকা থাকে। গ্রামের একটি পরিবারের প্রতিদিনের যে প্রয়োজন সেটি অন্যান্য শস্যের মাধ্যমে পূরণ হয়। কোরবানির পশু বিক্রি থেকে তারা একটি থোক টাকা পায়। এর মাধ্যমে তারা সারা বছর নগদ টাকার চাহিদার কিছু অংশ পূরণ করে। “ঈদ-উল-আযহার পশু বিক্রির জন্য যে যত বেশি বিনিয়োগ করবে সে তত বেশি লাভ পাবে। দেশের ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের একটি অন্যতম ক্ষেত্র ও গ্রাহক হলো খামারীগণ। এর মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের একটি উলে­খযোগ্য অংশ সম্পৃক্ত। গ্রামীণ এই শিল্পকে কেন্দ্র করে গরুর খাদ্যের চাহিদা মেটাতে অব্যবহৃত কৃষি জমিতে ঘাসের চাষ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের রপ্তানীযোগ্য অন্যতম পণ্য পশুর চামড়ার যোগানও আসছে এই খাত থেকে। বিশ্ববাজারে এ দেশের সব ধরনের চামড়ার চাহিদা রয়েছে। বিশ্বে প্রথম শ্রেণীর চামড়া ও চামড়া জাত প্রস্তুতকারী দেশ হিসাবে বাংলাদেশ উলে­খযোগ্য। বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, চামড়া সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক মাণদন্ড নিশ্চিত করা গেলে এবং সরকার এর প্রতি আন্তরিক হলে বছরে ৬শ’ কোটি ডলারের চামড়া পণ্য রপ্তানী সম্ভব। সাতক্ষীরা জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় ১ লক্ষ ৮ হাজার ৫টি পশু কুরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ৯ হাজার ৯৩০টি খামারে এসব পশু পালন করা হচ্ছে। তবে বেসরকারী হিসাব মতে এর সংখ্যা অনেক বেশি। কেউ শখের বশে, কেউ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোঁচাতে, কেউ সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে এসব খামার গড়ে তুলেছেন। ইতোমধ্যে স্থানীয় বেপারীরা বাড়িবাড়ি যেয়ে পশু অনুযায়ী দরদাম করে কিনতে শুরু করেছেন। তবে পশু খাদ্যের দাম বাড়ায় গরুর পালন করতে এবার খরচও হয়েছে অনেক বেশি। ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধ আর পশু খাদ্যের দাম কমানোর দাবি খামার মালিক ও বেপারিদের। কালিগঞ্জ কৃষি কর্মকর্তা ডাঃ রনজিত কুমার মন্ডল জানান, মোট আমিষের ৭৬ ভাগ আসে প্রাণি সম্পদ থেকে। জেলার পশু পালন থেকে সেই চাহিদা পুরণ করে। তিনি আরো জানান, জেলায় উৎপাদিত পশু কুরবাণির চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ চন্দ্র দাশ জানান, সাতক্ষীরায় চাষিরা দিন দিন গো-পালনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। তাদেরকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। আসন্ন ঈদে জেলার চাষিরা পশু বিক্রয় করে ভাল মুনাফা পাবে আশা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে বিগত অর্থবছরে দুই হাজার ৫০০ টন এলাচি, সাত হাজার ৬০০ টন দারুচিনি, ১৭০ টন লবঙ্গ এবং ৩৭০ টন জিরা আমদানি করা হয়েছে। কুরবানির বাজারে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হবে এসব পণ্যের। কুরবানির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো কামার আইটেম। ছুরি, বঁটি, দা, চাপাতি, কুড়াল, রামদা ছাড়া কুরবানিই সম্ভব নয়। সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কুরবানিতে পণ্যটির বাজার এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কুরবানি উদযাপনে চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত পশু প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শম রেজাউল করিম। একই সঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কুরবানির পশু বেচাকেনা থেকে শুরু করে চামড়া খাত পর্যন্ত সবধরণের সহযোগিতা করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com